تفكروا في خلق الله
أعرض المحتوى باللغة الأصلية
مقالة باللغة البنغالية تبين أن التفكر في خلق الله يُشعر بعظمة الله فيرسخ الإيمان ويقويه ويورث الخشية والخشوع ودوام التوجه إلى الله تعالى.
আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য দেখ এবং অনুভব কর
تفكروا في خلق الله
<بنغالي>
চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
شودري أبو الكلام أزاد
সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
مراجعة: د/ محمد منظور إلهي
আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য দেখ এবং অনুভব কর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা কর
মহান শিল্পীর সৃষ্টি কত সুন্দর! কোথাও কোনো খুঁত নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
﴿ ٱلَّذِي خَلَقَ سَبۡعَ سَمَٰوَٰتٖ طِبَاقٗاۖ مَّا تَرَىٰ فِي خَلۡقِ ٱلرَّحۡمَٰنِ مِن تَفَٰوُتٖۖ فَٱرۡجِعِ ٱلۡبَصَرَ هَلۡ تَرَىٰ مِن فُطُورٖ ٣ ثُمَّ ٱرۡجِعِ ٱلۡبَصَرَ كَرَّتَيۡنِ يَنقَلِبۡ إِلَيۡكَ ٱلۡبَصَرُ خَاسِئٗا وَهُوَ حَسِيرٞ ٤ ﴾ [الملك: ٣، ٤] .
“যিনি সাত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন।পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোনো অসামাঞ্জস্য পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফেরাও, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফেরাও একের পর এক। সেই দৃষ্টি অবনমিত ও শান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে। [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ৩-৪]
স্রষ্টার এত সুন্দর নিখুঁত সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। তাই পৃথিবীর সব কিছুর ওপর মানুষকেই কর্তৃত্ব করতে দিয়েছেন তিনি। কত সৌভাগ্য মানুষের। মানুষ এ সত্যকে আনন্দ ও ভোগের মোহে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে না।
মানুষের পঞ্চেন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ অন্যতম। অন্তঃকরণকে ভেতরে ও বাইরে সঠিক পথ দেখায় চোখের দৃষ্টি। চোখের দৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যিক গুরুত্ব যা-ই থাক না কেন এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম।
সাদা-কালো টিভির পর্দায় সব কিছু সাদা-কালো দেখায়। রঙিন টিভির পর্দায় সাদাকে সাদা, কালোকে কালো, লালকে লাল, সবুজকে সবুজই দেখায়। তার চেয়েও মূল্যবান সম্পদ মানুষের দু’টি রঙিন চোখের দৃষ্টি। চোখের রঙিন দৃষ্টিতে দুনিয়ার সব কিছুর প্রকৃত রূপ-রঙ ধরা পড়ে।
এমন মূল্যবান চোখ রাব্বুল আলামীনের শ্রেষ্ঠ উপহার। এ চোখের দৃষ্টি দিয়ে আমরা কত কী দেখি। সুন্দর-কুৎসিত, ভালো-মন্দ, উত্থান-পতন, নগ্নতা-বর্বরতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নয়ন জুড়ানো দৃশ্যাবলি। আবার এ চোখের দৃষ্টি দিয়েই কুরআন ও কিতাব পড়ি। এ চোখের দৃষ্টিতেই ধরা পড়ে রাজা-প্রজা এক কাতারে দাঁড়িয়ে স্রষ্টাকে সেজদা করছে, একসাথে কাবা তাওয়াফ করছে, এক সাথে ধর্ম-কর্ম পালন করছে। এ চোখের দৃষ্টিই প্রমাণ করছে শিশুকালে ও বার্ধক্যে মানুষ কত অসহায়, আবার যৌবনে কত শক্তিমান ও আমিত্বের অহঙ্কারে বেপরোয়া।
মানব সৃষ্টির রহস্যই মানুষকে অবাক করে দেয়। কোটি কোটি মানুষ, অথচ ভিন্ন ভিন্ন দেহের গঠন, কন্ঠস্বর, চেহারা, অন্তঃকরণ, মানুষের চোখ, জিহ্বা, নাক, কান, ত্বক, লিভার, কিডনি, সর্বোপরি মস্তিষ্ক ও হার্টের নৈপুণ্য ও কার্যকারিতা সত্যিই কি চিন্তার বিষয় নয় ? আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
﴿ إِنَّا خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن نُّطۡفَةٍ أَمۡشَاجٖ نَّبۡتَلِيهِ فَجَعَلۡنَٰهُ سَمِيعَۢا بَصِيرًا ٢ ﴾ [الانسان: ٢] .
“আমরা তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু হতে, আমরা তাকে পরীক্ষা করবো। এ জন্য আমরা তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন”। [সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ২]
যখন দেখি সব কিছু ভেদ করেও সূর্য ও রশ্মি ভিন্ন, আলাদা সূর্যের অস্তিত্ব, তখন কি চিন্তা না করে পারা যায় আল্লাহর কুরসী সবকিছু বেষ্টন করেও আলাদা রয়েছে তাঁর অস্তিত্ব। একটি ফুলের বাইরের সৌন্দর্য চোখ জুড়ায় বটে, কিন্তু ভিতরের কারুকার্য অবশ্যই জ্ঞানীদের চিন্তাকে অস্থির করে তোলে, মহাবিজ্ঞানী স্রষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। চোখের দৃষ্টি বিবেক বোধকে নাড়া দেয় যখন দেখি পানি বাষ্প হয়ে মেঘে পরিণত হয়, মেঘ ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে ধরায় নামে এবং নদী হয়ে সাগরে মিলায়। মাটি কত চমৎকারভাবে স্তরে স্তরে পানি ধরে রাখছে। দুর্বা ও গাছপালা গজাচ্ছে। মাটির আঁধারে শস্যকণা অঙ্কুরিত হচ্ছে। বাতাস অক্সিজেনসমৃদ্ধ হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আকাশে সুশোভিত গ্রহ-নক্ষত্র বিরাজ করছে, সূর্য ও চন্দ্র কত সুশৃঙ্খলভাবে দায়িত্ব পালন করছে, পৃথিবী নামক দোলনায় পাহাড় ও পর্বতগুলো পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করছে। খুঁটি ছাড়াই গ্রহ-নক্ষত্র ঝুলছে। ফ্রান্সিস বেকন যথার্থই বলেছেন, যারা মাটি থেকে দুর্বা গজানো কিংবা আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরার মতো স্রষ্টার অলৌকিকত্ব অনুধাবন করতে পারেনা, স্রষ্টা তাদের সৎপথে আনার জন্য অন্য কোনো অলৌকিকত্ব প্রদর্শন করেন না।
মানুষের প্রাণের কি কোনো রূপ আছে? বাতাসের কি কোনো নির্দিষ্ট আকার আছে? মানুষের এত সুন্দর দেহশিল্পে মরণ হানা দেয় কেন? আগুন নিভে কোথায় যায়? পাখিরা বহুদূর পথ অতিক্রম করেও আবার আবাসস্থলে ফিরে আসে কার দিক-নির্দেশনায়? দিবস মিলাচ্ছে রাতে, রাত্রি মিলাচ্ছে দিবসের মধ্যে কার ইঙ্গিতে? এসব বিষয় অবশই চিন্তাশীলদের ভাবিয়ে তোলে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন,
﴿ وَسَخَّرَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ وَٱلنُّجُومُ مُسَخَّرَٰتُۢ بِأَمۡرِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ١٢ ﴾ [النحل: ١٢]
“তোমাদের জন্য আল্লাহ অধীনস্থ করেছেন রাত্রি ও দিবসকে, সূর্য ও চন্দ্রকে। নক্ষত্ররাজি তাঁর হুকুমের অধীন, নিশ্চয়ই এতে বহু নিদর্শন রয়েছে যারা জ্ঞানী তাদের জন্য”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১২]
এ পৃথিবীর গাছপালা, জীবজন্তু, পাহাড়-পর্বত সব কিছু স্রষ্টাকে সেজদা করছে। মহান রাহমানুর রাহীমের তসবি পড়ছে। কোকিল মধুর স্বরে, মৌমাছি গুনগুন করে আল্লাহ পাকের তসবীহ পড়ছে। কেউ বসে নেই, সবাই ইবাদতে মশগুল, আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত। শুধু আমরা মানুষ অযথা সময় নষ্ট করছি। আল্লাহকে চিনতে ভুল করছি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
﴿ أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَسۡجُدُۤ لَهُۥۤ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُ وَٱلنُّجُومُ وَٱلۡجِبَالُ وَٱلشَّجَرُ وَٱلدَّوَآبُّ وَكَثِيرٞ مِّنَ ٱلنَّاسِۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيۡهِ ٱلۡعَذَابُۗ وَمَن يُهِنِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِن مُّكۡرِمٍۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَفۡعَلُ مَا يَشَآءُ۩ ١٨﴾ [الحج: ١٨]
“তুমি কি দেখ না আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে; সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। আবার অনেকের উপর শাস্তি অবধারিত হয়েছে। আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা চান তাই করেন”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ১৮]
আসমান ও জমিনের এতসব সৌন্দর্য, অলৌকিকত্ব, মানুষের অন্তঃকরণের রঙিন চোখের পর্দায় অবশ্যই ধরা পড়ার কথা, যদি সে অন্ধ না হয়। মানুষ তার বোধশক্তি, মেধাকে কাজে না লাগালে, এ নিয়ে চিন্তা বা গবেষণা না করলে, মহান শিল্পীর সৃষ্টিকে বাইরের চোখ ও মনের চোখ কোনো চোখেই বড় করে দেখবে না। স্রষ্টার অস্তিত্বের কোটি কোটি প্রমাণ তার কাছে শূন্য বলে বিবেচিত হবে।
চোখের দৃষ্টিকে সঠিকভাবে পরিচালিত না করলে মানুষের কলব ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ পশুর চেয়েও নিম্নস্তরে পৌঁছে যায়। অসভ্য, বর্বর, নীতিহীন, দুর্নীতিপরায়ণ, স্বার্থপর ও বিবেকহীন হয়। বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মানসিক অশান্তিতে ভোগে। বিপদে আপদে পতিত হয়।
মূলতঃ দ্বীন-দুনিয়ার সব কাজের উৎস হলো অন্তঃকরণ। আর চোখের দৃষ্টি হলো অন্তঃকরণের মুখ্য সৈনিক। এ বিষয়ে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার চোখের ওপর জয়ী হতে পারে না তার অন্তঃকরণের কোনো মূল্য নেই’। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩ ﴾ [غافر: ١٩]
“চোখের অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত”। [সূরা গাফির (মুমিন), আয়া : ১৯]
মানুষের দুনিয়াবি জিন্দেগি স্বপ্নের মতো ফুরিয়ে যাবে। তাই দুনিয়ায় থেকেই পরকালের প্রকৃত জীবনের ভাবনা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَا هَٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَهۡوٞ وَلَعِبٞۚ وَإِنَّ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَ لَهِيَ ٱلۡحَيَوَانُۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ٦٤ ﴾ [العنكبوت: ٦٤]
“এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়, পারলৌকিক জীবন তো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত”। [সূরা আল-‘আনকাবুত, আয়াত: ৬৪]
যে দয়াময় আলো, বাতাস, আগুন, পানি ও হরেক রকম খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার সাথে নিমকহারামি না করি। চোখের দৃষ্টি দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে দেখি, মনের দৃষ্টি দিয়ে স্রষ্টাকে দেখি। প্রাণ ভরে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱللَّهُ أَخۡرَجَكُم مِّنۢ بُطُونِ أُمَّهَٰتِكُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ شَيۡٔٗا وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَٱلۡأَفِۡٔدَةَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٧٨﴾ [النحل: ٧٨]
“আর আল্লাহ তোমাদের বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমতাবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদিগকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তঃকরণ, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৭৮]
দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর পরম নি‘আমত। আসুন দৃষ্টিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্রষ্টার অফুরন্ত জ্ঞান রাজ্যে প্রবেশ করে স্রষ্টার সৃষ্টিকে মর্মে মর্মে অনুধাবন করি। বাইরের চোখের দৃষ্টিতে আর মনের চোখের দৃষ্টিতে একাকার হয়ে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি করি এবং আমলে সালেহের হাত প্রসারিত করি। তবেই আল্লাহর খাঁটি প্রেমিকের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সৎ কাজ হবে ইবাদত।
সমাপ্ত