حقيقة الإيمان بالقضاء والقدر

أعرض المحتوى باللغة الأصلية anchor

translation লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
1

ভাগ্যে বিশ্বাস : একটি তাত্ত্বিক আলোচনা

4.1 MB DOCX
2

ভাগ্যে বিশ্বাস : একটি তাত্ত্বিক আলোচনা

578.7 KB PDF

مقالة باللغة البنغالية، تتحدث عن حقيقة الإيمان بالقضاء والقدر، وتتطرق إلى بعض المفاهيم الخاطئة التي راجت في أوساط بعض المسلمين حيال هذا الأمر الذي يعتبر ركنا أساسيا من أركان الإيمان .

    ভাগ্যে বিশ্বাস : একটি তাত্ত্বিক আলোচনা

    حقيقة الإيمان بالقضاء والقدر

    <بنغالي>

    আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

    عبد الله شهيد عبد الرحمن

    —™

    সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

    مراجعة: د/ محمد منظور إلهي

    ভাগ্যে বিশ্বাস : একটি তাত্ত্বিক আলোচনা

    অনেকে প্রশ্ন করেন, মানুষ ভালো-মন্দ যত কাজ করে তা আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাকদীরের লিপিবদ্ধ থাকার কারণে করে। তাই মানুষের কি দোষ?

    কেন আল্লাহ তাকে মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দেবেন?

    আবার অনেকের প্রশ্নের ভাষা এ রকম যে, আমি জান্নাতে যাবো না জাহান্নামে যাবো তাতো অনেক আগেই লেখা হয়েছে। তাই কষ্ট করে নেক আমল করে লাভ কী? তাকদীরে জান্নাত লেখা থাকলে কোনো আমল না করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে। আর কপালে জাহান্নাম লেখা থাকলে হাজার ভালো কাজ করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে না।

    আবার অনেকে বলেন, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া যখন কিছুই হয় না, তাই আমি যদি কোনো খারাপ কাজ করে থাকি তবে তা আল্লাহর ইচ্ছায় করেছি। আল্লাহ ইচ্ছে করলে আমাকে ফিরিয়ে রাখতে পারতেন।

    প্রশ্নের ভাষার ধরন যাই হোকনা কেন, কথা হল সব কিছু যখন আল্লাহর ইচ্ছায় হয় তখন মানুষের কী দোষ?

    এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে অনেক বিজ্ঞজন হিমশিম খেয়েছেন। এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন, তাকদীর সম্পর্কে বেশি আলোচনা বা প্রশ্ন করা ঠিক নয়। এ ব্যাপারে যুক্তি-তর্ক করতে যেয়ে অনেকে হয়েছে গোমরাহ। উদ্ভব হয়েছে জাবরিয়া, কাদরিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরকার।

    তাই আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো আমার এ প্রবন্ধে।

    প্রথম কথা হল, এ ধরনের প্রশ্ন কোনো মুসলিম করতে পারে কিনা?

    আল-কুরআনুল কারীমে যা দেখা যায় তাতে প্রমাণিত হয় যে, এ ধরনের প্রশ্ন কাফির মুশরিকরা করত। যেমন ইরশাদ হচ্ছে :

    ﴿سَيَقُولُ ٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْ لَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَآ أَشۡرَكۡنَا وَلَآ ءَابَآؤُنَا وَلَا حَرَّمۡنَا مِن شَيۡءٖۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ حَتَّىٰ ذَاقُواْ بَأۡسَنَاۗ قُلۡ هَلۡ عِندَكُم مِّنۡ عِلۡمٖ فَتُخۡرِجُوهُ لَنَآۖ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَإِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا تَخۡرُصُونَ ١٤٨﴾ [الانعام: ١٤٨]

    “অচিরেই মুশরিকরা বলবে, আল্লাহ যদি চাইতেন, আমরা শির্ক করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না এবং আমরা কোনো কিছু হারাম করতাম না। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, যে পর্যন্ত না তারা আমার আযাব আস্বাদন করেছে। বল, তোমাদের কাছে কি কোনো জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমাদের জন্য প্রকাশ করবে? তোমরা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করছ এবং তোমরা তো কেবল অনুমান করছ"[সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৪৮]

    দেখুন! মুশরিকরা তাদের শির্কের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছার কথা বলে রেহাই পাবার প্রয়াস পেয়েছে এবং তাদের এ কথা দ্বারা তারা ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অতএব যারা আল্লাহর ইচ্ছার দোহাই দিয়ে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে ও সৎকর্ম থেকে দূরে থাকতে চায় তারা মূলতঃ মুশরিকদের মতোই কাজ করল ও তাদের অনুসরণ করল।

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন,

    ﴿وَقَالَ ٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْ لَوۡ شَآءَ ٱللَّهُ مَا عَبَدۡنَا مِن دُونِهِۦ مِن شَيۡءٖ نَّحۡنُ وَلَآ ءَابَآؤُنَا وَلَا حَرَّمۡنَا مِن دُونِهِۦ مِن شَيۡءٖۚ كَذَٰلِكَ فَعَلَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۚ فَهَلۡ عَلَى ٱلرُّسُلِ إِلَّا ٱلۡبَلَٰغُ ٱلۡمُبِينُ ٣٥﴾ [النحل: ٣٥]

    “আর যারা শির্ক করেছে, তারা বলল, যদি আল্লাহ চাইতেন তবে আমরা তাকে ছাড়া কোনো কিছুর ইবাদত করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না। আর তার বিপরীতে আমরা কোনো কিছু হারাম করতাম না। এমনিই করেছে, যারা তাদের পূর্বে ছিল। সুতরাং স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া রাসূলদের কি কোনো কর্তব্য আছে?" [সূরা আন নাহল, আয়াত: ৩৫]

    তিনি আরো বলেন,

    ﴿ وَقَالُواْ لَوۡ شَآءَ ٱلرَّحۡمَٰنُ مَا عَبَدۡنَٰهُمۗ مَّا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنۡ عِلۡمٍۖ إِنۡ هُمۡ إِلَّا يَخۡرُصُونَ ٢٠ ﴾ [الزخرف: ٢٠]

    “আর তারা (মুশরিকরা) বলে, পরম করুণাময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের ইবাদত করতাম না, এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু মনগড়া কথা বলছে"[সূরা আয-যখরুফ, আয়াত: ২০]

    উল্লি­খিত তিনটি আয়াতে কারীমা পাঠ করে কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে জানা গেল,

    (এক) মুশরিকরা আল্লাহর ইচ্ছার দোহাই দিয়ে শির্ক করত। তাদের শির্কের প্রমাণ হিসাবে তারা আল্লাহর ইচ্ছাকে পেশ করত।

    (দুই) তারা বিশ্বাস করত সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। এ বিশ্বাস পোষণ করার পরও তারা কাফির ও মুশরিক রয়ে গেছে।

    (তিন) তারা আল্লাহর গুণাবলীতে বিশ্বাস করত (যেমন, সূরা যুখরুফের আলোচ্য আয়াতে রহমান গুণ) তারপরেও তারা মুশরিক থেকেছে।

    (চার) তারা তাদের শির্কের সমর্থনে আল্লাহর ইচ্ছাকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করে বলেছে যে, তারা এসব আল্লাহর ইচ্ছায়ই করছে। আল্লাহ তাদের মিথ্যাবাদী বলেছেন। কারণ, তারা বলেছে তাদের শির্কি কাজগুলো আল্লাহর ইচ্ছায় করা হচ্ছে।

    (পাঁচ) তাদের এ সকল বক্তব্য নতুন কিছু নয়। তাদের পূর্বপুরুষরাও এ রকম বক্তব্য দিয়েছে।

    এরপরও যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি কাফির-মুশরিকদের মত অনুরূপ প্রশ্ন করে তাকে আমরা কয়েকটি উত্তর দিতে পারি।

    এক. যে ব্যক্তি এ ধরনের প্রশ্ন করবে তাকে বলা হবে, আপনি জান্নাতে যেতে চান না জাহান্নামে?

    উত্তরে সে হয়তো বলবে, আমি জান্নাতে যেতে চাই।

    তারপর তাকে জিজ্ঞেস করুন, আচ্ছা আপনার তাকদীরে কী লেখা আছে জান্নাত না জাহান্নাম, আপনি কি তা জানেন? সে বলবে, না আমি জানি না।

    আচ্ছা, তাহলে বিষয়টি আপনার কাছে অজ্ঞাত। আর অজ্ঞাত বিষয়ের উপর নির্ভর করে কোনো ভালো কাজ ছেড়ে দেওয়া কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে?

    পরীক্ষায় পাশ করবে না ফেল করবে, এটা অজানা থাকার পরও মানুষ অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা দেয় পাশ করার আশায়। অপারেশন সাকসেস হবে কি হবে না, তা অজ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও মানুষ অপারেশন করায় রোগমুক্তির আশায়। ফলাফল অজ্ঞাত থাকার অজুহাতে কোনো কাজ ছেড়ে দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা সুস্থ মস্তিস্কের কাজ হতে পারে না। আপনার তাকদীরে জান্নাত লেখা আছে না জাহান্নাম তা আপনার জানা নেই। কিন্তু আপনার লক্ষ্য যখন জান্নাত তখন লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য অবশ্যই কাজ করতে হবে। যেমন, দুনিয়াবি-পার্থিব সকল কাজ-কর্ম ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন করার বেলায় আমরা করে থাকি।

    আর জান্নাত ও জাহান্নামের স্রষ্টা যখন বলে দিয়েছেন এটা জান্নাতের পথ আর ওটা জাহান্নামের পথ তখন তা বিশ্বাস করে আমল করতে অসুবিধা কোথায়?

    দুই. যার তাকদীরে জান্নাত লেখা আছে সাথে সাথে এটাও লেখা আছে যে, সে জান্নাত লাভের জন্য নেক আমল করবে তাই জান্নাতে যাবে। আর যার তাকদীরে জাহান্নাম লেখা আছে সাথে সাথে এটাও লেখা আছে যে, সে জাহান্নামের কাজ করবে ফলে সে জাহান্নামে যাবে।

    তিন. সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। মানুষ সকল কাজই আল্লাহর ইচ্ছায় করে ঠিকই কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক করে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ করার জন্য সে জান্নাতে যাবে আর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ না করার জন্য সে জাহান্নামে যাবে।

    প্রশ্ন হতে পারে, ইচ্ছা (ইরাদা বা মাশিয়্যত) ও সন্তুষ্টি (রেযা) এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে কি?

    হ্যাঁ অবশ্যই আছে। ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির মধ্যে পার্থক্য আছে অবশ্যই। ছোট একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা সহজে বুঝানো যেতে পারে। যেমন এক ব্যক্তির ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ল। চিকিৎসক বললেন তার পেটে অপারেশন করতে হবে। অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

    এখন বেচারা অপারেশন করাতে রাজী নয়। এ কাজে সে সন্তুষ্ট নয়, তবুও সে অপারেশন করিয়ে থাকে। এমন কি এ কাজের জন্য ডাক্তারকে টাকা পয়সা দেয়। অতএব, দেখা গেল এ অপারেশনে তার ইচ্ছা পাওয়া গেল, কিন্তু তার সন্তুষ্টি পাওয়া যায় নি। অপারেশন করাতে সে ইচ্ছুক কিন্তু রাজী নয়। দেখা গেল ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি দুটো আলাদা বিষয়।

    অনেক সময় ইচ্ছা পাওয়া যায়, কিন্তু সেখানে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। কিন্তু যেখানে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় সেখানে ইচ্ছা অবশ্যই থাকে।

    তাই সকল কাজ মানুষ আল্লাহর ইচ্ছায় করে ঠিকই কিন্তু তার সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি অনুযায়ী করে না। বিভ্রান্তি তখনই দেখা দেয় যখন ইচ্ছা দ্বারা সন্তুষ্টি বুঝানো হয়। তাই জান্নাতে যেতে হলে তাঁর ইচ্ছায় কাজ করলে হবে না। তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন বলে প্রমাণ আছে সে সকল কাজ করতে হবে।

    আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি বুঝার উপায়:

    কোন কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর কোন্ কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন তা বুঝা যাবে কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা। কোনো কাজ সংঘটিত হয়ে গেলেই সাধারণভাবে বুঝে নেয়া হবে যে, এটা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় হয়েছে। কিন্তু তা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে হয়েছে কিনা তা বুঝা যাবে না কুরআন বা হাদীসের মাধ্যম ব্যতীত। কুরআন বা হাদীসে উক্ত বিষয়টির সমর্থন থাকলে বুঝা যাবে সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সম্পন্ন হয়েছে। আর যদি কাজটি কুরআন বা হাদীসের পরিপন্থী হয় তাহলে ধরে নেয়া হবে কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টির খেলাফ হয়েছে। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করলে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যাবে। আর তার সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ না করলে জাহান্নামে যেতে হবে। ভালো করে মনে রাখতে হবে সব কাজ আল্লাহর ইচ্ছায় হয় ঠিকই কিন্তু সব কাজ তার সন্তুষ্টি মোতাবেক হয় না। আরো মনে রাখতে হবে ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি এক বিষয় নয়। দুটো আলাদা বিষয়।

    চার. আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তার ইচ্ছায় সবকিছু হয়। তাই তিনি ইচ্ছা করেই মানুষকে ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন। যাতে মানুষ নিজ ইচ্ছায় ও স্বাধীনতায় ভালো ও মন্দ পথ অবলম্বন ও বর্জন করতে পারে।

    যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

    ﴿وَقُلِ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّكُمۡۖ فَمَن شَآءَ فَلۡيُؤۡمِن وَمَن شَآءَ فَلۡيَكۡفُرۡۚ ﴾ [الكهف: ٢٩]

    “বল, সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক"[সূরা আল কাহাফ, আয়াত: ২৯]

    তাই বলা যায় আল্লাহর দেওয়া ইচ্ছাশক্তিতেই মানুষ ভালো-মন্দ কাজ করে। তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের ইচ্ছাশক্তি রহিত করে ভালো বা মন্দ কাজ করতে বাধ্য করতে পারেন।

    মানুষ কোনো খারাপ কাজ করলে এ কথা বলা যাবে না যে, এ ক্ষেত্রে মানুষের কোনো ইচ্ছা ছিল না। এ কথাও বলা যাবে না যে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজটি হয়েছে। কাজটা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি মানুষের ইচ্ছাও কাজটা করার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে, এটাও সত্য।

    কীভাবে এটা সম্ভব? একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

    উদাহরণটা হল, বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভূমিকা। বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, তেমনি বিদ্যুৎ গ্রাহকও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু দায় বহন করতে হবে বিদ্যুৎ গ্রাহকের। মাস শেষে যখন হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল আসল, তখন কর্তৃপক্ষকে এ কথা বলে দোষ দেওয়া চরম বোকামি হবে যে, তারা কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ করল, তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে আমার বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারত।

    তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে আপনার খরচ কমাতে পারত এটা যেমন ঠিক, তেমনি আপনিও সাশ্রয়ী হয়ে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারতেন, এটাও ঠিক। আর খরচের এ দায়ভার বহন করবে গ্রাহক, সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ নয়। কেননা এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ইচ্ছা ও কর্ম দায়ী।

    তাই মানুষের ভালো-মন্দ আমলের ব্যাপারেও এটা বলা যায় যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষ কাজ করত না। আবার মন্দ কাজ করার জন্য মানুষই দায়ী- তার ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের জন্য।

    পাঁচ. আল্লাহ নিজের ইচ্ছায় মানুষকে ভালো ও মন্দ কাজ করার ইচ্ছাশক্তি দান করে থাকেন। তিনি তাঁর ইচ্ছায় কাউকে ভালো বা মন্দ কাজ করার জন্য বাধ্য করেন না। যদি তিনি এরূপ করতেন তাহলে দুনিয়ার সকল মানুষ ঈমানদার হয়ে যেতো।

    যেমন, তিনি বলেন,

    ﴿ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ لَأٓمَنَ مَن فِي ٱلۡأَرۡضِ كُلُّهُمۡ جَمِيعًاۚ أَفَأَنتَ تُكۡرِهُ ٱلنَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُواْ مُؤۡمِنِينَ ٩٩ ﴾ [يونس: ٩٩]

    “আর যদি তোমার রব চাইতেন, তবে যমীনের সকলেই ঈমান আনত। তবে কি তুমি মানুষকে বাধ্য করবে, যাতে তারা মুমিন হয়?" [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯]

    সারকথা, নিজেদের খারাপ কাজগুলো আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাকদীরের লেখার কারণে হয়েছে এ ধরনের কথা বলে খারাপ কর্মের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। তাকদীরের দোহাই দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি বা জান্নাত লাভ কোনটাই করা যাবে না।

    এ ক্ষেত্রে ছোট একটা ঘটনা উল্লে­খ না করে পারছি না। আর তা হল:

    উমার রাদিয়াল্লাহ 'আনহুর খেলাফত কালে এক লোক চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হল ও আদালতে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হল। শাস্তি হিসেবে তার হাত কাটার নির্দেশ দেওয়া হল। লোকটি উমর রা. এর কাছে গিয়ে বলল, মুসলিম জাহানের হে মহান খলীফা! আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছু হয় না। আমিও তো আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে নই। আমি তো তার ইচ্ছায়ই চুরি করেছি। আমার হাত কাটা যাবে কেন?

    উমার রাদিয়াল্লাহ 'আনহু বললেন, সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় বা তাকদীরের কারণে হয়। তুমি যেমন আল্লাহর ইচ্ছায় চুরি করেছ, তেমনি তোমার হাত আল্লাহর ইচ্ছায়ই কাটা হবে।

    মহান বিচার দিবসে যদি কোনো মানুষ আল্লাহ তা'আলাকে বলে যে, 'হে আল্লাহ! আমি বিশ্বাস করতাম আপনার ইচ্ছা ছাড়া কিছু হয় না, আপনিও তাই বলেছেন। আমি যে অন্যায় করেছি, জুলুম করেছি তা তো আপনার ইচ্ছায়ই করেছি। কাজেই আজ আপনি এ কাজের অপরাধে আমাকে জাহান্নামে পাঠাবেন কেন?'

    তখন আল্লাহ আহকামুল হাকেমীন যদি বলেন, ঠিক আছে। তোমার কথাই ঠিক। আমার ইচ্ছায় যখন পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে, আমার নাফরমানী করেছ, তখন আমার ইচ্ছায়ই তোমাকে জাহান্নামে যেতে হবে। তুমি তো জানো আমার ইচ্ছার সামনে তোমার কিছুই করার নেই। আমার ইচ্ছায় যখন পাপাচার করতে তোমার আপত্তি ছিল না তাহলে জাহান্নামে যেতে আপত্তি কেন? তখন সে মানুষটির কিছু বলার থাকবে কি?

    আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক অর্থ্যে ভাগ্য বিষয়ে ধারণা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন!!

    সমাপ্ত

    ক্যাটাগরিসমূহ