الإيمان بالله عز وجل

أعرض المحتوى باللغة الأصلية anchor

translation লেখক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
1

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

6.8 MB DOCX
2

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

858.9 KB PDF

الإيمان بالله عز وجل : الإيمان بالله تعالى يتضمن أربعة أمور : الإيمان بوجود الله ، والإيمان بربوبيته والإيمان بألوهيته والإيمان بأسمائه وصفاته ، وقد تناولت هذه المقالة جوانب من هذه الأمور الأربعة وبينت ما يلازمها من الشروط والحقوق .

    আল্লাহর ওপর ঈমান

    الإيمان بالله عز وجل

    < বাংলা - بنغالي - Bengali >

    সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    ثناء الله نذير أحمد

    —™

    সম্পাদক:

    মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

    ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    مراجعة:

    محمد شمس الحق صديق

    د/ أبو بكر محمد زكريا

    আল্লাহর ওপর ঈমান

    আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদেরকে অঢেল অনুকম্পায় ঢেকে রেখেছেন। জলে-স্থলে, তাদের শরীর ও পরিপার্শ্বে তথা সমগ্র পৃথিবীতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অসংখ্য নি'আমত ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের কল্যাণে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿أَلَمۡ تَرَوۡاْ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَسۡبَغَ عَلَيۡكُمۡ نِعَمَهُۥ ظَٰهِرَةٗ وَبَاطِنَةٗۗ ﴾ [لقمان: ٢٠]

    “তোমরা কি দেখ না নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে যা কিছু আছে আল্লাহ তা'আলা তার সবই তোমাদের অধীনস্ত করে দিয়েছেন, আর তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নি'আমতসমূহ পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।" [সূরা লুকমান, আয়াত: ২০]

    অন্যত্র বলেন,

    ﴿وَءَاتَىٰكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلۡتُمُوهُۚ وَإِن تَعُدُّواْ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ لَا تُحۡصُوهَآۗ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَظَلُومٞ كَفَّارٞ ٣٤﴾ [ابراهيم: ٣٤]

    “যা তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নি'আমত হিসেব করে দেখ, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।" [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩৪]

    তবে বান্দার ওপর সবচেয়ে বড় নি'আমত হলো নবী-রসূল প্রেরণ করা, কিতাব অবতীর্ণ করা ও ইসলামের হিদায়াত দান করা। এ নি'আমতের দাবি হলো, আল্লাহ তা'আলার প্রাপ্য হক-অধিকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন ও যথাযথভাবে তা প্রয়োগের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া। আল্লাহ তা'আলার গুরুত্বপূর্ণ হকসমূহের প্রথমটি হলো, তার ওপর ঈমান; যা গ্রথিত হবে হৃদয়ের গভীরে এবং যার অভিব্যক্তি খোঁজে পাবে বাহ্যিক আচরণে।

    আল্লাহ তা'আলার ওপর ঈমান চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে:

    প্রথমত: আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্বের ওপর ঈমান:

    আল্লাহ আছেন, ছিলেন, থাকবেন। হৃদয়ের গভীরে কঠিনভাবে এ বিশ্বাস পোষণ করার নামই আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস। এ বিশ্বাস কোনো অলীক ধারণা প্রসূত নয়; বরং এর পক্ষে রয়েছে অসংখ্য দলীল। উদাহরণত আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিজগৎ ও এতে সক্রিয় নিখুঁত পরিচালনা পদ্ধতি আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্ব নির্দেশক একটি বড় প্রমাণ। স্রষ্টা ছাড়া কোনো কিছুই নিজেকে অস্তিত্বে আনতে পারে না। কেননা অস্তিত্বের পূর্বে প্রতিটি জিনিসই থাকে অবিদ্যমান। আর অবিদ্যমান জিনিসের পক্ষে সৃষ্টি করা কল্পনাতীত ব্যাপার। আকস্মিকভাবে কোনো কিছুর অস্তিত্বে আসাটাও অসম্ভব। কারণ সংগঠিত প্রতিটি বস্তু বা সম্পাদিত প্রতিটি কাজের একজন সংগঠক-সম্পাদনকারী থাকা জরুরি। সুতরাং এ মহাবিশ্ব ও এতে বিরাজমান বস্তুসামগ্রী স্বসৃষ্ট কোনো বিষয় হতে পারে না। অকস্মাৎ তৈরি হয়েও অস্তিত্বে আসে নি এগুলো। আসা সম্ভবও নয়। তাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও পরিচালনার পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক রয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার। সৃষ্টিজগৎ তার সমগ্র বিশালতা নিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ ঘোষণা করছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। স্রষ্টার অস্তিত্ব একটি অমোঘ বাস্তবতা। আর যা বাস্তব তা অস্বীকার করাই হলো প্রবঞ্চনা। তাই মহাবিশ্বের কঠিন বাস্তবতার নিরেখেই আমরা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস রাখতে বাধ্য।

    দ্বিতীয়ত: আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের ওপর ঈমান:

    অর্থাৎ সৃষ্টি, সৃষ্টির মালিকানা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার। তিনিই পরিচালক-প্রতিপালক। তিনি একাই আদেশ-নির্দেশের অধিপতি। আল-কুরআনে এসেছে,

    ﴿أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [الاعراف: ٥٤]

    “শুনে রাখো, সৃষ্টি ও আদেশ একমাত্র তাঁরই কাজ।" [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৫৪]

    অন্যত্র এসেছে,

    ﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ﴾ [فاطر: ١٣]

    “ইনিই আল্লাহ! তোমাদের রব, সাম্রাজ্য তারই। তার পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আটির আবরনেরও মালিক নয়।" [সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ১৩]

    আল্লাহ তা'আলার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। তবে এমন অনেকেই আছে যারা জেদ ধরে অহঙ্কারবশত নিজের কথায় আস্থা না রেখেও আল্লাহ তা'আলার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। যেমন ফির'আউন তার সম্প্রদায়কে বলেছ,

    ﴿أَنَا۠ رَبُّكُمُ ٱلۡأَعۡلَىٰ ﴾ [النازعات: ٢٤]

    “আমিই তোমাদের সেরা রব।" [সূরা আন-নাযি'আত, আয়াত: ৩৮]

    সে আরো বলেছে,

    ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَأُ مَا عَلِمۡتُ لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرِي فَأَوۡقِدۡ لِي يَٰهَٰمَٰنُ عَلَى ٱلطِّينِ فَٱجۡعَل لِّي صَرۡحٗا لَّعَلِّيٓ أَطَّلِعُ إِلَىٰٓ إِلَٰهِ مُوسَىٰ وَإِنِّي لَأَظُنُّهُۥ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ﴾ [القصص: ٣٨]

    “হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোনো উপাস্য আছে।" [সূরা আল কাসাস, আয়াত: ৩৮]

    ফির'আউন নিজের ওপর আস্থা নিয়ে কথাগুলো বলে নি। কারণ আল্লাহ তা'আলা সূরা আন-নামলে বলেছেন,

    ﴿وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنْفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا﴾. سورة النمل :14

    “তারা অহংকারের বশবর্তী হয়ে নিদর্শনাবলী প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল।" [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]

    মূসা আলাইহিস সালাম ফির'আউনকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

    ﴿لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَٰفِرۡعَوۡنُ مَثۡبُورٗا ١٠٢ ﴾ [الاسراء: ١٠٢]

    “তুমি অবশ্যই জান যে, আসমান ও জমিনের রবই এসব নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ নাযিল করেছেন। হে ফির'আউন, আমার ধারণা তুমি ধ্বংস হতে চলেছ"[সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]

    এতে প্রমাণিত হলো যে, মুশরিকরা আল্লাহ তা'আলার উলুহিয়্যাতের ব্যাপারে অংশীবাদী বিশ্বাস পোষণ করা সত্ত্বেও রুবুবিয়্যাতকে স্বীকার করে নিত নির্দ্বিধায়। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿قُل لِّمَنِ ٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهَآ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٤ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ٨٥ قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ ٨٦ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٨٧ قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٨ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ ٨٩﴾ [المؤمنون: ٨٤، ٨٩]

    “বলন! পৃথিবী ও এতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বলো। তারা বলবে, সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? বলুন! সপ্তাকাশ ও মহা-'আরশের মালিক কে? তারা বলবে, আল্লাহ। বলুন! তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না? বলুন! তোমাদের জানা থাকলে বলো, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না। তারা বলবে আল্লাহর। বলুন! তাহলে কোথা থেকে তোমারেকে জাদু করা হচ্ছে?" [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৪-৮৯]

    আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,

    ﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡعَلِيمُ ٩ ﴾ [الزخرف: ٩]

    “আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, কে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ।" [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৯]

    অন্যত্র বলেন,

    ﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٨٧﴾ [الزخرف: ٨٧]

    “আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তবে অবশ্যই তারা বলবে আল্লাহ।" [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৮৭]

    তৃতীয়ত: আল্লাহ তা'আলার উলুহিয়্যাতের ওপর ঈমান:

    অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই সত্যিকারার্থে রব। বিনয় ও মহব্বত সমন্বিত ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়, হতে পারে না। আল-কুরআনে এসেছে,

    ﴿وَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ لَّآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلرَّحۡمَٰنُ ٱلرَّحِيمُ ١٦٣﴾ [البقرة: ١٦٣]

    “আর তোমাদের ইলাহ এক-অদ্বিতীয় ইলাহ। তিনি ভিন্ন অন্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি করুণাময়, দয়ালু।" [সূরা আল-বাক্বারা আয়াত: ১৬৩]

    আরো এসেছে,

    ﴿ءَأَرۡبَابٞ مُّتَفَرِّقُونَ خَيۡرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّارُ ٣٩ مَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسۡمَآءٗ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ إِنِ ٱلۡحُكۡمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٤٠﴾ [يوسف: ٣٩، ٤٠]

    “পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভালো, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছ। আল্লাহ এদের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি।" [সূরা ইউসুফ আয়াত: ৩৯-৪০]

    প্রভুত্ব একমাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্য। ইবাদতের অধিকারী একমাত্র তিনিই। প্রভুত্বের ক্ষেত্রে যারা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার হিসেবে সাব্যস্ত করে তাদের ধারণা ভুল, অবাস্তব। যারা এ ভুল ধারণায় নিপতত, অত্যন্ত জোরালো যুক্তিতে খণ্ডন করা হয়েছে তাদের বিশ্বাস পবিত্র কুরআনের নানা জায়গায়। কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হলো:

    এক. মুশরিকরা যেসব বিষয়কে প্রভু মনে করে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, প্রভুত্বের কোনো বৈশিষ্ট্যই তাদের মধ্যে নেই। পবিত্র কুরআনে বিশেষভাবে এ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো হয়েছে। যুক্তিগুলোর সারকথা হল, আল্লাহ ভিন্ন অন্যসব উপাস্য সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে না। কারও ইষ্ট-অনিষ্টের ক্ষমতা এদের নেই। রক্ষা অথবা ধ্বংস কোনো কিছুরই ক্ষমতা এদের নেই। এরা জীবন-মৃত্যুর মালিক নয়। আসমান-জমিনের কোনো জিনিসের মালিক এরা নয় এবং এতে তাদের আদৌ কোনো অংশীদারিত্ব নেই। আল-কুরআনে এসেছে,

    ﴿وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةٗ لَّا يَخۡلُقُونَ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ وَلَا يَمۡلِكُونَ لِأَنفُسِهِمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗا وَلَا يَمۡلِكُونَ مَوۡتٗا وَلَا حَيَوٰةٗ وَلَا نُشُورٗا ٣ ﴾ [الفرقان: ٣]

    “তারা আল্লাহ ব্যতীত অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তারাই সৃষ্ট, নিজেদের কল্যাণ-অকল্যাণ এর মালিক তারা নয়। জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মালিক এরা নয়।" [সূরা আল-ফুরকান আয়াত:: ৩]

    আরো এসেছে,

    ﴿أَيُشۡرِكُونَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ١٩١ وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ لَهُمۡ نَصۡرٗا وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٢﴾ [الاعراف: ١٩١، ١٩٢]

    “তারা কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে, যে একটি বস্তুও সৃষ্টি করে নি; বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তারা না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজের সাহায্য করতে পারে।" [সূরা আল-আ'রাফ আয়াত: ১৯১-১৯২]

    দুই. মুশরিকরা বিশ্বাস করত যে, আল্লাহ তা'আলাই প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, তাঁর হাতেই সমস্ত জিনিসের মালিকানা, তিনি রক্ষা করেন এবং তাঁর অধিকারের বলয় থেকে কেউ পালাতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَهُمۡ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ يُؤۡفَكُونَ ٨٧ ﴾ [الزخرف: ٨٧]

    “তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।" [সূরা আয-যুখরুফ আয়াত:: ৮৭]

    অন্যত্র বলেন,

    ﴿قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ أَمَّن يَمۡلِكُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَمَن يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُۚ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٣١ ﴾ [يونس: ٣١]

    “আপনি জিজ্ঞাসা করুন, কে রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে ও জমিন থেকে কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেই-বা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ! আপনি বলুন, তার পরেও তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করছ না?" [সূরা ইউনুস আয়াত: ৩১]

    অংশীবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধদের নিজেদের দেওয়া সাক্ষীর ভিত্তিতেই তাদের উপর জরুরি হয়ে পড়ে যে, একমাত্র আল্লাহকেই তারা রব হিসেবে মানবে। একমাত্র তাঁরই ইবাদতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করবে। নিছক ধারণাজাত রব ও ইলাহের ইবাদত থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে আনবে যারা নিজেদেরই কোনো কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক নয়।

    চর্তুথত: আল্লাহ তা'আলার নাম ও সিফাতের ওপর ঈমান

    আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্ব ও এককতায় বিশ্বাসের পাশাপাশি তার সমস্ত নাম ও সিফাত (গুণসমূহ) এর প্রতি বিশ্বাস সমান গুরুত্বপূর্ণ। আল-কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামের বিশুদ্ধ সুন্নাহয় আল্লাহ তা'আলার যেসব নাম ও সিফাতের কথা এসেছে সেসবের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ মর্মে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো অপব্যাখ্যা, নিষ্ক্রিয়করণ, আকৃতি ও উপমা প্রদান ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে কঠিনভাবে। আল-কুরআনে এসেছে,

    ﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠ ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

    “আর আল্লাহর আছে সব উত্তম নাম। কাজেই সেগুলো দিয়েই তাঁকে ডাকো। আর তাদেরকে বর্জন করো, যারা তার নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।" [সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত:: ১৮০]

    অন্যত্র এসেছে,

    ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ﴾ [الشورا: ١١]

    “কোনো কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]

    সমাপ্ত

    ক্যাটাগরিসমূহ