×
কালেমায়ে শাহাদাতের পর ইসলামের অন্যতম বড় একটি ভিত্তি সালাত। সালাত হচ্ছে ঈমান এবং কুফুরের মাঝে পার্থক্যকারী। অধিকাংশ মানুষ সালাতের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত নয়। এটি কুরআন-হাদীসের আলোকে অযু, গোসল এবং সালাতের ব্যাপারে ছোট একটি প্রবন্ধ। এতে সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

সালাত সালাত

সংযুক্তি

অযু, গোসল এবং পবিত্রতা বিষয়ক প্রবন্ধ

মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন

অনুবাদক : মুহাম্মাদ ইদরীস আলী

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

الصلاة الصلاة …ويليها رسائل في الوضوء والغسل والطهارة

(باللغة البنغالية)

محمد بن صالح العثيمين

ترجمة: محمد إدريس علي

مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

সূচিপত্র

সালাত সকল ইবাদতের মূল. 5

সালাত হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট আমল. 6

সালাত হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন এবং পাপ মোচনের নদী.. 7

সালাত হচ্ছে পাপসমুহের কাফফারা.. 7

সালাত হচ্ছে বান্দার জন্য দুনিয়াতে সংরক্ষণ এবং নিরাপদ আশ্রয় 8

সালাত হচ্ছে পরকালে জান্নাতে প্রবেশের জন্য আল্লাহর অঙ্গিকার 8

সালাত হচ্ছে প্রথম জিনিস যা সম্পর্কে কিয়ামতের দিন বান্দাকে জিজ্ঞাসা করা হবে 9

সালাত হচ্ছে নূর. 10

সালাত আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে নিভৃতে আলাপ. 10

সালাত হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপত্তা দানকারী.. 11

সালাত হচ্ছে কুফুরী ও শির্ক থেকে রক্ষাকারী.. 11

ফজর ও আসরের সালাত জামা‘আতে আদায় করা নেফাকী থেকে নিরাপদ থাকা 12

জামা‘আতে সালাত আদায় করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত 12

অযু, গোসল এবং সালাত.. 16

অযু. 16

অযুর পদ্ধতি... 16

গোসল. 18

গোসলের পদ্ধতি... 18

তায়াম্মুম. 18

তায়াম্মুমের পদ্ধতি... 19

সালাত.. 19

সালাতের পদ্ধতি... 19

সালাতে যে সমস্ত কাজ করা মাকরূহ. 26

সালাত ভঙ্গকারী জিনিসসমুহ. 27

সালাতে সাজদাহ সাহুর কিছু হুকুম. 27

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............

কালেমায়ে শাহাদাতের পর ইসলামের অন্যতম বড় একটি ভিত্তি সালাত। সালাত হচ্ছে ঈমান এবং কুফুরের মাঝে পার্থক্যকারী। অধিকাংশ মানুষ সালাতের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত নয়। এটি কুরআন-হাদীসের আলোকে অযু, গোসল এবং সালাতের ব্যাপারে ছোট একটি প্রবন্ধ। এতে সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

সালাত সালাত

হে মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ, ইসলাম সালাতের ব্যাপারটি অত্যন্ত বড় করে দেখেছে, এর স্মরণকে সমুন্নত করেছে এবং একে সব কিছুর ওপর স্থান দিয়েছে। এটি কালেমায়ে শাহাদাতের পর ইসলামের অন্যতম বড় একটি ভিত্তি। যেমন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ»

“ইসলাম পাঁচটি জিনিসের ওপর প্রতিষ্ঠিত: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল -এ সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, সাওম পালন করা এবং বাইতুল্লাহ-এর হজ করা।”[1]

সালাত সকল ইবাদতের মূল: সালাত সকল ইবাদতের মূল এবং আনুগত্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে উত্তম আনুগত্য। কুরআন ও হাদীসের বহু জায়গায় এর প্রমাণ এসেছে, তা সংরক্ষণ করে সর্বদা নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথভাবে আদায় করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ﴾ [البقرة: ٢٣٨]

“তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮]

তিনি আরো বলেন:

﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣ ﴾ [البقرة: ٤٣]

“তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত প্রদান কর আর রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৪৩]

তিনি আরো বলেন:

﴿ٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَاتِهِمۡ دَآئِمُونَ ٢٣﴾ [المعارج: ٢٣]

“ঐ সকল মুসল্লী ব্যতীত, যারা সর্বদা তাদের সালাতের প্রতি যত্নবান।” [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ২৩]

তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্বে সর্বশেষ উপদেশ ছিল,

«الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ، ومَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ»

“সালাত, সালাত এবং তোমাদের অনুচরবৃন্দ (এর প্রতি সদয় হও)[2]

সালাত হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট আমল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোৎকৃষ্ট আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন:

«الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا»

“সময়মত সালাত পড়া।”[3]

সালাত হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন এবং পাপ মোচনের নদী: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟» قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ، قَالَ: «فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا»

“মনে কর তোমাদের কারো দরজার সামনে যদি একটি নদী থাকে, এতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে কি? তারা বললেন: জি না, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তিনি বললেন: এমনিভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ, এর দ্বারা আল্লাহ সকল পাপ মোচে দেন।”[4]

সালাত হচ্ছে পাপসমুহের কাফফারা: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«الصَّلَاةُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ، مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائِرُ»

“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমু‘আ থেকে অন্য জুমু‘আ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী পাপসমুহের কাফফারাস্বরূপ যতক্ষণ না কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়।”[5]

সালাত হচ্ছে বান্দার জন্য দুনিয়াতে সংরক্ষণ এবং নিরাপদ আশ্রয়: জুন্দুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللهِ»

“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত পড়বে সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।”[6]

সালাত হচ্ছে পরকালে জান্নাতে প্রবেশের জন্য আল্লাহর অঙ্গিকার: উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنَّ اللَّهُ عَلَى الْعِبَادِ، فَمَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنَّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنَّ، كَانَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ......»

“আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এগুলো আদায় করবে এবং এর হক হালকা ভেবে নষ্ট না করবে, তার জন্য আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার রয়েছে যে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন...।” (লম্বা হাদীস)[7]

সালাত হচ্ছে প্রথম জিনিস যা সম্পর্কে কিয়ামতের দিন বান্দাকে জিজ্ঞাসা করা হবে: আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلَاةُ، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ»

“কিয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম যে জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে তা হচ্ছে সালাত, যদি তা সঠিক হয় তবে তার সকল আমলই সঠিক হবে, আর যদি তা বাতিল হয় তবে তার সকল আমলই বাতিল হয়ে যাবে।”[8]

সালাত হচ্ছে নূর: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত আছে যে, তিনি বলেছেন:

«الصَّلَاةُ نُورٌ»

“সালাত হচ্ছে নূর।”[9]

সালাত আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে নিভৃতে আলাপ: হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

«قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ، وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ، فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ: {الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ} [الفاتحة: 2]، قَالَ اللهُ تَعَالَى: حَمِدَنِي عَبْدِي........»

“আমি সালাতকে আমার এবং বান্দার মধ্যে দুই ভাগে ভাগ করেছি এবং বান্দা যা চাইবে তা পাবে, বান্দা যখন বলে: আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন, আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে...”(লম্বা হাদীস)[10]

সালাত হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপত্তা দানকারী: আবূ জুহাইর উমারা ইবন রুআইবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«لَا يَلِجُ النَّارَ مَنْ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا»

“যে ব্যক্তি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত পড়বে সে জাহান্নামে যাবে না। অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত[11]

সালাত হচ্ছে কুফুরী ও শির্ক থেকে রক্ষাকারী: জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ»

“আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: বান্দা এবং শির্ক ও কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা।”[12]

ফজর ও আসরের সালাত জামা‘আতে আদায় করা নেফাকী থেকে নিরাপদ থাকা: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنَ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا»

“মুনাফিকদের ওপর ফজর ও আসরের সালাতের চেয়ে অন্য কোনো সালাত ভারী নয়, আর যদি তারা জানতো যে, এতে কী (পরিমাণ পূণ্য) রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এতে উপস্থিত হতো।”[13]

জামা‘আতে সালাত আদায় করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত: ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللهَ غَدًا مُسْلِمًا، فَلْيُحَافِظْ عَلَى هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ، فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّهُنَّ مَنْ سُنَنَ الْهُدَى، وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ، لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ، وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ، ثُمَّ يَعْمِدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الْمَسَاجِدِ، إِلَّا كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ خَطْوَةٍ يَخْطُوهَا حَسَنَةً، وَيَرْفَعُهُ بِهَا دَرَجَةً، وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً، وَلَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلَّا مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤْتَى بِهِ يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ»

“কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মুসলিম হয়ে সাক্ষাৎ করা যাকে খুশী করে সে যেন এ সালাতগুলোর প্রতি যত্নবান হয়, যখনই ডাকা হোক না কেন। কারণ, আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের রীতিনীতি প্রবর্তন করেছেন। আর যদি তোমরা তোমাদের ঘরে সালাত আদায় কর যেমন জামা‘আত থেকে পেছনে পড়া এ ব্যক্তি ঘরে সালাত পড়েছে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাতকে পরিহার করবে, আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাতকে পরিহার কর তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। কোনো ব্যক্তি যখন ভালোভাবে অযু করে কোনো মসজিদের দিকে বের হয়, আল্লাহ তার প্রতিটি কদমে একটি করে সাওয়াব লিখেন, একটি করে সম্মান বৃদ্ধি করেন এবং এর দ্বারা একটি পাপ মোচন করেন। আমরা নিজেদের মধ্যে দেখেছি শুধু প্রসিদ্ধ মুনাফিকরাই জামা‘আত থেকে পেছনে পড়তো, আর নিশ্চয় কোনো ব্যক্তিকে দুই জনের কাঁধে ভর করে নিয়ে এসে কাতারের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হত।[14]

হে প্রিয় মুসলিম ভ্রাতা,

· আযান শুনার সাথে সাথে মসজিদে চলে যান।

· আপনার হাতে যা কিছু রয়েছে তা রেখে দেন। আল্লাহু আকবারই সর্বপ্রথমে।

· সর্বদা পবিত্রতার ওপর থেকে আল্লাহর ডাকের জন্য প্রস্তুত থাকুন।

· ভালোভাবে অযু করুন, মসজিদের দিকে বেশি বেশি পায়ে হেটে যান এবং এক ওয়াক্ত সালাত পড়ে অন্য ওয়াক্তের সালাতের জন্য অপেক্ষায় থাকুন।

· সালাতের আত্মা হচ্ছে বিনয়ী। কাজেই বিনয়ী হয়ে সালাত পড়ুন।

· সালাতে কুরআনের যে অংশ পড়া হয় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন।

· সালাতে এদিক সেদিক বা ঘড়ির দিকে তাকানো এবং কাপড় নিয়ে অযথা খেলা করা করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, তা বিনয় বহির্ভূত কাজ।

· পবিত্রাবস্থায় সকাল সকাল ঘুমিয়ে যান, যেন ফজরের সালাতের জন্য খুব সহজেই জাগা সম্ভব হয়।

· নফল সালাতের প্রতি যত্নবান হোন, বিশেষ করে বিতরের সালাত এবং রাত্রে দুই রাকাত হলেও সালাত পড়ুন।

· প্রথম কাতারে সালাত পড়ার চেষ্টা করুন এবং সালাতের পর যিকির-আযকার না করে মসজিদ থেকে বের হবেন না।

অযু, গোসল এবং সালাত:

প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক, দুরুদ এবং সালাম বর্ষিত হোক সকল সৃষ্টির শিরোমনি ও মুত্তাকীদের ইমাম সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সকল সাহাবীগণের ওপর। অতঃপর আল্লাহর দিকে মুখাপেক্ষী বান্দা মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন রহ. বলেন: কুরআন-হাদীসের আলোকে অযু, গোসল এবং সালাতের ব্যাপারে এটি একটি ছোট প্রবন্ধ।

 অযু

অযু হচ্ছে, ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। যেমন: প্রশ্রাব, পায়খানা, হাওয়া বের হওয়া, গভীর ঘুম এবং উটের মাংস খাওয়ার কারণে যে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়।

অযুর পদ্ধতি:

১। মুখে উচ্ছারণ না করে মনে মনে অযুর নিয়ত করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু, সালাত এবং কোনো ইবাদতেই মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করেন নি। কারণ, আল্লাহ অন্তরের খবর জানেন বিধায় মুখে উচ্চারণ করে বলার প্রয়োজন নেই।

২। অতঃপর বিসমিল্লাহ বলবে।

৩। দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে।

৪। তিনবার কুলি করবে এবং নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করবে।

৫। তিনবার মুখ ধৌত করবে: এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত প্রস্থে এবং মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ পর্যন্ত লম্বায়।

৬। দুই হাত তিনবার করে ধৌত করবে: হাতের আঙ্গুল থেকে কনুই পর্যন্ত, প্রথমে ডান হাত পরে বাঁ হাত।

৭। একবার মাথা মাসাহ করবে: দুই হাত ভিজিয়ে মাথার সামনা থেকে শুরু করে পিছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে পুণরায় সামনে নিয়ে আসবে।

৮। দুই কান একবার মাসাহ করবে: শাহাদাত আঙ্গুল কানের ছিদ্রে ঢুকিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা কানের বাহির দিক (পিঠ) মাসাহ করবে।

৯। অতঃপর দুই পা তিনবার করে ধৌত করবে: পায়ের আঙ্গুলের মাথা থেকে শুরু করে গোড়ালি পর্যন্ত, প্রথমে ডান পা পরে বাঁ পা।

 গোসল

গোসল: আর তা হচ্ছে বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন। যেমন, জানাবত ও ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করা।

গোসলের পদ্ধতি:

১। মুখে উচ্চারণ না করে অন্তরে নিয়ত করবে

২। বিসমিল্লাহ বলবে

৩। পুরোপুরি অযু করবে

৪। অতঃপর মাথায় হাতে পানি দিবে এবং পানি দেওয়ার সময় তিনবার ঢালবে।

৫। তারপর পুরো শরীর ধৌত করবে।

 তায়াম্মুম

তায়াম্মুম হলো: যে ব্যক্তি পানি না পাবে অথবা পানি ব্যবহারে ক্ষতি হবে, তার ওপর ওয়াজিব হচ্ছে গোসল এবং অযুর পরিবর্তে মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা।

তায়াম্মুমের পদ্ধতি: গোসল বা অযু যা করবে তার নিয়ত করার পর মাটিতে অথবা মাটি লেগে থাকা দেয়ালে দুই হাত মেরে মুখ ও কব্জি পর্যন্ত দুই হাত মাসাহ করবে।

 সালাত

সালাত হচ্ছে: কাজ ও কথা সম্বলিত একটি ইবাদত। এর শুরু হচ্ছে তাকবীরে তাহরিমা এবং শেষ হচ্ছে সালাম।

যখন কেউ সালাতের ইচ্ছা পোষণ করবে তখন অযু করা ওয়াজিব যদি ছোট নাপাকী থাকে বা গোসল করা ওয়াজিব যদি বড় নাপাকী থাকে অথবা যদি পানি না পায় বা পানি ব্যবহারে ক্ষতি হয় তবে তায়াম্মুম করবে। আর শরীর, কাপড় ও সালাতের জায়গা নাপাকী থেকে পবিত্র করবে।

সালাতের পদ্ধতি:

১। কোনো দিকে না তাকিয়ে এবং অন্য দিকে না ফিরে পুরো শরীরে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে।

২। মুখে উচ্চারণ না করে অন্তরে নিয়ত করবে।

৩। আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরিমা বাঁধবে এবং তাকবীর দেওয়ার সময় দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।

৪। ডান হাতের কব্জি বাঁ হাতের কব্জির উপর রেখে বুকের উপর রাখবে।

৫। তারপর দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ (ছানা) পড়বে, আর তা হচ্ছে:

اللهم باعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب اللهم نقني من خطاياي كما ينقّى الثوب الأبيض من الدنس، اللهم اغسلني من خطاياي بالماء والثلج والبرد.

উচ্ছারণ: আল্লাহুম্মা বা‘ইদ বাইনী ওয়াবাইনা খাতাইয়া-ইয়া কামা বা‘আত্তা বাইনাল মাশরিকি ওয়ালমাগরিব। আল্লহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়া-ইয়া কামা নাক্কাইতাস-সাউবুল আবইয়াযু মিনাদ-দানাস। আল্লাহুম্মাগ-সিলনী মিন খাতাইয়া-ইয়া বিল মায়ি ওয়াস-সালজি ওয়ালবারদ।

অথবা পড়বে

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولاإله غيرك.

উচ্ছারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারকাসমুকা ওয়াতাআ‘লা জাদ্দুকা ওয়ালাইলাহা গাইরুক।

৬। অতঃপর আউযুবিল্লাহি মিনাশ্শাইতনির রাজীম বলবে।

৭। বিসমিল্লাহ বলে সূরা আল-ফাতিহা পড়বে:

﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧﴾ [الفاتحة: ٢، ٧]

উচ্ছারণ: আল-হামদু লিল্লাহি রবিবল ‘আলামীন। আর-রাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়াইয়্যাকা নাসতা‘ঈন। ইহদিনাস-সিরাত্বাল মুস্তাকীম। সিরাত্বাল্লাযীনা আন-‘আমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্ব-দ্বা---ল্লীন।

তার পর বলবে আমীন অর্থাৎ হে আল্লাহ কবুল করুন।

৮। তারপর কুরআন থেকে যা সহজ মনে হয় তা পড়বে, ফজরের সালাতে ক্বিরাত লম্বা করবে।

৯। তারপর রুকুতে যাবে অর্থাৎ আল্লাহর সম্মানে তার পিঠকে ঝুঁকাবে, রুকুর সময় তাকবীর দিবে এবং দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে। সুন্নাত হচ্ছে তার পিঠকে মাথা বরাবর নোয়াবে এবং দুই হাত হাটুতে রেখে আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে রাখবে।

১০। রুকুতে তিনবার বলবে সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম, আর যদি “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”-ও বলে তাহলে ভালো।

১১। সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে উঠবে, সেই সাথে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে। মুক্তাদী সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলবে না, এর পরিবর্তে “রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ” বলবে।

১২। রুকু থেকে উঠে বলবে রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ, ... মিলআস সামাওয়াতি অমিলআল আরদ্বি অমিলআ মা’শি’তা মিন শাইয়িম বা‘দ।

১৩। আল্লাহু আকবার বলে বিনয়ের সাথে প্রথম সাজদাহ’য় যাবে এবং তার সাতটি অঙ্গে সাজদাহ করবে: নাকসহ কপাল, দুই হাত, দুই হাটু এবং দুই পায়ের সামনের অংশ। তার বাহুদ্বয় তার পার্শ্ব থেকে ফাঁকা রাখবে, দুই হাত মাটিতে বিছাতে পারবে না এবং আঙ্গুলের মাথাগুলো কিবলামুখী রাখবে।

১৪। সাজদাহ’য় তিনবার বলবে: সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা। আর যদি “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী” ও বলে তাহলে ভালো।

১৫। আল্লাহু আকবার বলে সাজদাহ থেকে মাথা উঠাবে।

১৬। দুই সাজদাহ’র মাঝে ডান পা খাড়া রেখে বাঁ পায়ের উপর বসবে এবং ডান হাত ডান উরুর হাটুর নিকটে রেখে খিনসর ও বিনসর আঙ্গুলদ্বয় মুষ্টি বেঁধে শাহাদাত অঙ্গুলি উঠিয়ে রেখে দো‘আর সময় নড়াবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা মধ্যাঙ্গুলির সাথে হালাকার মতো মিলিয়ে রাখবে এবং বাঁ হাত বাঁ উরুর উপর হাটুর নিকটে রাখবে।

১৭। দুই সাজদাহ’র মাঝে বসাবস্থায় বলবে: রব্বিগ ফিরলী ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুকনী, ওয়াজবুরনী ওয়া‘আফিনী।

১৮। আল্লাহু আকবার বলে বিনয়ের সাথে দ্বিতীয় সাজদাহ’য় যাবে, প্রথম সাজদাহ’র মতো যা বলার এবং করার তা করবে।

১৯। আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সাজদাহ থেকে উঠে প্রথম রাকাতের মতো দ্বিতীয় রাকাত সম্পন্ন করবে কিন্তু এতে দো‘আয়ে ইসতেফতা বলবে না।

২০। দ্বিতীয় রাকাত শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে বসবে যেভাবে বসেছিল দুই সাজদাহ’র মাঝে।

২১। এ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়বে:

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ. اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ. أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ.

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস-সালাওয়াতু ওয়াত্তয়্যিবাতু আস-সালামু ‘আলাইকা আয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ আস-সালামু আলাইনা ওয়া‘আলা ইবাদিল্লাহিস সলিহীন আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহ। আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়াআলা আলি মুহাম্মাদ কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া‘আলা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া‘আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া‘আলা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আউযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নাম, ওয়াআউযুবিল্লাহি মিন আযাবিল কাবর, ওয়াআউযুবিল্লাহি মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ-দাজ্জাল, ওয়াআউযুবিল্লাহি মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়ালমামাত।

অতঃপর দুনিয়া ও আখেরাতের যা ভালো মনে হয় তা আল্লাহর নিকট চাইবে।

২২। তারপর “আস-সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ” বলে প্রথমে ডানে পরে বাঁয়ে সালাম ফিরাবে।

২৩। আর যদি সালাত তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তবে প্রথম তাশাহ্‌হুদ (আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসূলুহ) বলার পর

২৪। আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যাবে এবং দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।

২৫। তার বাকী সালাত দ্বিতীয় রাকাতের মতো পুরা করবে, কিন্তু এতে শুধু সূরা আল-ফাতিহা পড়বে।

২৬। অতঃপর তাওয়াররুক করে বসবে: ডান পা খাড়া রেখে বাঁ পা ডান পায়ের পেশীর নিচ দিয়ে সামান্য বের করে দিয়ে নিতম্বের উপর বসবে এবং তার হস্তদ্বয় প্রথম তাশাহহুদের ন্যায় উরুর উপর রাখবে।

২৭। এ বৈঠকে তাশাহহুদ পুরোটা পড়বে।

২৮। তারপর “আস সালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ” বলে প্রথমে ডানে পরে বাঁয়ে সালাম ফিরাবে।

 সালাতে যে সমস্ত কাজ করা মাকরূহ

২৯। সালাতে এদিক সেদিক মাথা বা চোখ ফিরানো, কিন্তু আকাশের দিকে তাকানো হারাম।

৩০। বিনা প্রয়োজনে নড়াচড়া বা কাপড় নিয়ে খেলা করা।

৩১। ব্যস্ত রাখতে পারে এমন কিছু নিয়ে সালাত পড়া। যেমন, ভারী কোনো কিছু বা দৃষ্টি কাড়ে এমন রঙ্গীন কিছু।

৩২। কোমরে হাত রাখা ।

 সালাত ভঙ্গকারী জিনিসসমুহ

১। সালাতে ইচ্ছাকৃত কথা বলা, যদিও স্বল্প হয়।

২। পুরো শরীরে কিবলা থেকে অন্য দিকে ফিরে যাওয়া।

৩। পেছন দিয়ে বায়ু বের হওয়া এবং অযু ও গোসল ওয়াজিবকারী জিনিসসমুহ।

৪। বিনা প্রয়োজনে ধারাবাহিকভাবে অতিরিক্ত নড়াচড়া।

৫। সালাতে অট্টহাসি হাসা, যদিও স্বল্প হয়।

৬। ইচ্ছাকৃতভাবে সালাতে রুকু, সাজদাহ, কিয়াম বা কোনো বৈঠক অতিরিক্ত করা।

৭। স্বেচ্ছায় ইমামের আগে কোনো কিছু করা।

 সালাতে সাজদাহ সাহুর কিছু হুকুম

১। সালাতে ভুল করে যদি কেউ কোনো রুকু, সাজদাহ, কিয়াম বা বৈঠক বৃদ্ধি করে, তবে সালাম ফিরিয়ে দুইটি সাজদাহ সাহু দিয়ে আবার সালাম ফিরাবে। যেমন, কেউ যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে পঞ্চম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর স্মরণ হলে বা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে বিনা তাকবীরে ফিরে এসে বসে শেষ তাশাহ্‌হুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে দুইটি সাজদাহ সাহু দিয়ে আবার সালাম ফিরাবে। এমনিভাবে সালাত শেষ করার পর যদি স্মরণ হয় যে, সালাতে অতিরিক্ত হয়েছে, তবে দুইটি সাজদাহ সাহু করে সালাম ফিরাবে।

২। সালাত পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সালাম ফিরানোর পর যদি নিকটবর্তী সময়ে স্মরণ হয় বা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যেন সালাতের প্রথমাংশের সহিত শেষাংশ ভিত্তি করা যায় তাহলে বাকী সালাত পুরা করে সালাম ফিরিয়ে দুইটি সাজদাহ সাহু দিয়ে আবার সালাম ফিরাবে। যেমন, যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে যদি ভুলে তৃতীয় রাকাতে সালাম ফিরিয়ে দেওয়ার পর স্মরণ হয় বা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে চতুর্থ রাকাত পুরা করে সালাম ফিরিয়ে দুইটি সাজদাহ সাহু করে আবার সালাম ফিরাবে। কিন্তু যদি দেরীতে স্মরণ হয় তাহলে আবার নতুন করে প্রথম থেকে সালাত পড়বে।

৩। যদি ভুলে প্রথম তাশাহহুদ বা কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেয় তাহলে সালামের পূর্বে দু’টি সাজদাহ সাহু দিবে। আর কোনো কিছু করতে হবে না। কিন্তু যদি সেই জায়গায় (যা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে) থাকতেই স্মরণ হয়ে যায় তবে তা পুরা করবে, তার জন্য আর কোনো কিছু (সাহু সাজদাহ) করতে হবে না, আর যদি সেই জায়গা ছেড়ে আসার পর নতুন (কোনো ওয়াজিব বা অন্য) কিছু শুরু করার পূর্বে স্মরণ হয়ে যায় তাহলে ফিরে গিয়ে তা পুরা করতে হবে না। যেমন, যদি প্রথম তাশাহ্‌হুদ ভুলে গিয়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য পুরোপুরি দাঁড়িয়ে যায় তবে আর ফিরে আসা যাবে না, সালামের পূর্বে দুইটি সাজদাহ সাহু দিবে। আর যদি তাশাহ্‌হুদের জন্য বসে তাশাহ্‌হুদ পড়তে ভুলে যায় কিন্তু দাঁড়ানোর পূর্বেই স্মরণ হয়ে যায় তাহলে তাশাহ্‌হুদ পড়ে নিয়ে বাকী সালাত পুরা করবে, তার জন্য আর কোনো কিছু (সাহু সাজদাহ) করতে হবে না। এমনিভাবে যদি না বসে দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু পুরোপুরি দাঁড়ানোর পূর্বেই স্মরণ হয়ে গেলে ফিরে এসে তাশাহ্‌হুদ পড়ে বাকী সালাত পুরা করবে। আলেমগণ বলেছেন: তার দাঁড়িয়ে যাওয়াটা সালাতে অতিরিক্ত হওয়ার কারণে সে দুইটি সাজদাহ সাহু করবে। আল্লাহই ভালো জানেন।

৪। যদি সালাতে সন্দেহ হয় যে, সে দুই রাকাত পড়েছে না তিন রাকাত? কোনোটাই ঠিক করতে না পারে তাহলে একীন বা কমের ওপর ভিত্তি করবে এবং সালামের পূর্বে দু’টি সাজদাহ সাহু দিয়ে আবার সালাম ফিরাবে। যেমন, যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে সন্দেহ হলো যে, এটি দ্বিতীয় রাকাত না তৃতীয় রাকাত? কোনোটাই স্থির করতে পারলো না, তবে তা দ্বিতীয় রাকাত নির্ধারণ করে সালাত পুরা করার পর সালামের পূর্বে দুইটি সাজদাহ সাহু দিয়ে সালাম ফিরাবে।

৫। যদি সালাতে সন্দেহ হয় যে, সে দুই রাকাত পড়েছে না তিন রাকাত এবং কোনো একটি নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে এর ওপর ভিত্তি করে বাকী সালাত পুরা করবে কম হোক বা বেশি হোক এবং সালামের পর দুইটি সাজদাহ সাহু দিয়ে আবার সালাম ফিরাবে। যেমন, যোহরের সালাত পড়তে গিয়ে দ্বিতীয় রাকাতে সন্দেহ হলো যে, এটি দ্বিতীয় রাকাত না তৃতীয় রাকাত এবং সে স্থির করতে পেরেছে যে এটি তৃতীয় রাকাত, তাহলে এটি তৃতীয় রাকাত নির্ধারণ করে বাকী সালাত পুরা করে সালামের পর দুইটি সাজদাহ সাহু দিয়ে আবার সালাম ফিরাবে।

আর যদি সালাত সমাপ্ত করার পর সন্দেহ হয় তাহলে নিশ্চিত হওয়া ব্যতীত এর দিকে ফিরবে না, এমনকি যদি অধিক সন্দেহ হয় তবু ও না, কেননা তা কু-মন্ত্রনা থেকে হয়।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬।

[2] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৫১৫৬, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫।

[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৭।

[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৩।

[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৭।

[7] আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১৪২০; নাসাঈ, হাদীস নং ৪৬১, হাদীসটি সহীহ।

[8] আল-মু‘জামুল আউসাত, হাদীস নং ১৮৫৯, হাদীসটি হাসান।

[9] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৩।

[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৫।

[11] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩৪।

[12] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২।

[13] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫১।

[14] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৪।