×
বক্ষমান পুস্তিকাটিতে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকার গুরুত্ব, এতে ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তা এবং তার উপায় ও কৌশল নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ইন্টারনেটে ইসলামের উপকারী এবং অপকারী ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও তুলে ধরা হয়েছে।

    ইন্টারনেট : দীন প্রচারের বিশ্বমঞ্চ

    [ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

    আলী হাসান তৈয়ব

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    2011-1432

    ﴿ الإنترنت: منصة عالمية للدعوة إلى الله ﴾

    « باللغة البنغالية »

    علي حسن طيب

    مراجعة: د. أبو بكر محمد زكريا

    2011 - 1432

    ইন্টারনেট : দীন প্রচারের বিশ্বমঞ্চ

    মানুষ যত কাজে সময় ব্যয় করে দাওয়াতের কাজে ব্যয়িত সময়গুলিই তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

    ﴿وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلٗا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ ٱلۡمُسۡلِمِينَ﴾ [فصلت : 33]

    ‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত?’ {ফুসসিলাত : ৩৩}

    ﴿قُلۡ هَٰذِهِۦ سَبِيلِيٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِيۖ وَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ﴾ [يوسف : 108]

    ‘বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ {সূরা ইউসুফ, আয়াত : ১০৮} রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

    «فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ»

    ‘আল্লাহর শপথ, ‘তোমার মাধ্যমে একজনকে আল্লাহর হেদায়েত দান করা তোমার জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম।’ [বুখারী : ৪২১০; মুসলিম : ৬৩৭৬]

    উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে বলা যায়, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য নবী-রাসূল, সমাজসংস্কারক ও আল্লাহর পথে একনিষ্ঠভাবে আহ্বানকারী পুণ্যবান ব্যক্তিদের পথ অনুসরণ করা। তাঁদের অনুবর্তিতায় দাওয়াতের কাজ করতে গিয়ে মনে রাখতে হবে, সমকালে মানুষের জীবনযাপনের ধরন বদলেছে। অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে প্রযুক্তির সকল শাখায়। ফলে মানুষের ওপর সরাসরি ছাপ রাখার পদ্ধতিও বদলেছে। বিশ্বজুড়ে ভিন্নতা এসেছে দাওয়াত ও প্রচার কৌশলে। আগে সমাজ সংস্কারকগণ বাজারে, মসজিদে ও বিভিন্ন লোক সমাগমস্থলে গিয়ে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে একজন দা‘ঈ (আল্লাহর পথে আহ্বানকারী) ঘরে বসেই রেডিও, টিভি, সিডি, বই ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদির মাধ্যমে দাওয়াত পৌঁছাতে পারেন কোটি কোটি লোকের দুয়ারে। এটিকে সহজ ও গতিশীল করেছে আন্তর্জাতিক তথ্যবিনিময় মাধ্যম তথা ইন্টারনেট। সন্দেহ নেই আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকার এক চমৎকার মাধ্যম এই ইন্টারনেট। কারণ-

    ১. ইন্টারনেটের প্রতি দিন দিন মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে

    এ যুগে যে কোনো তথ্যের জন্য মানুষ ইন্টারনেটের শরণাপন্ন হচ্ছে। বহির্বিশ্বের সকল ছাত্র-ছাত্রী প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ছুটে আসে ইন্টারনেটের দুয়ারে। আগে পৃথিবীর অনেক দেশেই ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত কোনো তথ্য পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হত। বর্তমানে এ অবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষ বাড়িতে বসে এমনকি নিজের খাস কামরায় শুয়েও অনায়াসে ইসলাম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। আর মোবাইলে নেট সার্ভিস যোগ হওয়ায় তথ্য চলে এসেছে প্রযুক্তি সচেতন মানুষের হাতের মুঠোয়।

    ইন্টারনেট কীভাবে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখছে তার ধারণা পাওয়া যায় ‘আল-সুন্নাহ’ নামক একটি ইসলামী সাইটের একজন দা‘ঈর বিবরণ পড়ুন। সাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট চ্যাটে আমাকে নিউজিল্যান্ডের এক বন্ধু জানিয়েছেন, তিনি বছর তিনেক আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তার বাবা-মা এখনো এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আমেরিকান তরুণী বোন জামিলা জানিয়েছেন, তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি ইন্টারনেট থেকে ইসলামী বই-পুস্তক প্রিন্ট করে রাখেন। তারপর সাপ্তাহিক ছুটির দিন সেগুলো মনযোগ দিয়ে পড়েন। তিনি আমার কাছে অনেক ছাত্র ও গবেষকের পক্ষে মেইল করেন। আমি ইসলাম সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসার জবাব দেই। আমি সর্বশেষ যে মেইলের জবাব দিয়েছি সেটা পাঠিয়েছেন ১৫ বছর বয়সী এক বৃটিশ তরুণ। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন মৃত্যুদণ্ডকে ইসলাম কোন দৃষ্টিতে দেখে? আমি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের মেইলও পেয়েছি। তিনি আমার কাছে ইসলাম বিষয়ে অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন।’

    ২. এই দাওয়াতি মাধ্যমে খরচ অনেক কম

    কেউ যদি মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর উদ্দেশে একটি ছোট প্রন্থও প্রকাশ করতে চান, এজন্য তাকে কমপক্ষে কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হবে। পক্ষান্তরে এ ব্যক্তি যদি বইটি ইন্টারনেটে প্রকাশ করেন, এর জন্য তাকে উল্লেখযোগ্য কোনো এমাউন্ট ব্যয় করতে হবে না। অনেক কোম্পানি আছে যাদের সেবা নিতে কোনো খরচই গুনতে হয় না। আল্লাহর পথে আহ্বানকারীরা এই সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে পারেন।

    ৩. এই মাধ্যমে কাজ করা অনেক সহজ

    ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াত দেয়া এবং এর পদ্ধতি রপ্ত করা একেবারে সহজ। এর জন্য কোনো সার্টিফিকেট লাভ বা কঠিন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। অনেক ইসলাম প্রচারক আছেন, যারা মাত্র ক’দিনে ইন্টারনেটে নিজস্ব পেইজ খোলা এবং অন্যের সঙ্গে তথ্য ও বাক্যের আদান-প্রদানের পদ্ধতি শিখেছেন। আজ এদের থেকে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন।

    ৪. অনেক ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হয় না

    যেমন ধরুন আপনি ঘুমিয়ে আছেন, সফরে আছেন কিংবা আপনি এখন ব্যস্ত, এ সময়েও কিন্তু আপনার দাওয়াতি সাইট বা আপনার সরবরাহকৃত তথ্য থেকে মানুষ উপকৃত হতে পারে। কিন্তু যিনি মসজিদের আসরে বা মাদরাসার শ্রেণীকক্ষে এলেম বিতরণ করেন, তিনি অসুস্থ হলে বা সফরে গেলে তার এলেম থেকে মানুষ তখন উপকৃত হতে পারে না। আবার দেখুন যখন কেউ আপনার কাছে ক্লাসে বা আসরে সরাসরি ইসলামের কোনো বিধান জানতে চাইবে, আপনি সে বিষয়ে না জানলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে অজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। অথচ ইন্টারনেটে যদি কেউ আপনার কাছে কিছু জানতে চায়, আপনি তার জবাব দেয়ার জন্য বই দেখা বা অভিজ্ঞ কোনো আলেমের শরণাপন্ন হবার যথেষ্ট সুযোগ পাবেন।

    ৫. ব্যাপক অঙ্গন ও একে কাজে লাগানো প্রয়োজনও অধিক

    দুঃখের সঙ্গে জানাতে হয়, অঙ্গনটিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে দুনিয়াবাসী আমাদেরকে অনেক অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। এমনকি এখনো এটিকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদেরকে তাদের পদ্ধতি এবং তাদের কোম্পানিগুলোর ওপরই নির্ভর করতে হয়। ব্যাপারটি একেবারে স্বতঃসিদ্ধ। বিষয়টি স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে।

    ইন্টারনেটে দাওয়াত দেবেন কিভাবে ?

    ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছানো যায় নানা উপায়ে। ইন্টারনেটে নিত্য নতুন সুবিধা যোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর উপায়ও বাড়ছে প্রতিদিন। যেমন মেইল বা বার্তা আদান-প্রদানের সুবিধা যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেট আবিষ্কারের পরে। আজ এটি মানুষকে হেদায়াতের দিকে আহ্বান এবং তাদের সামনে ইসলাম তুলে ধরার কার্যকরী মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এভাবে অনেক সেবাই ইদানীং সংযোজিত হয়েছে, যা আমরা দীন প্রচারে কাজে লাগাতে পারি। নিচে আপনাদের সামনে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকার কিছু কার্যকর পদ্ধতি তুলে ধরছি :

    প্রথম. মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার উদ্দেশে ওয়েব সাইট বানানো

    এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াতের সবচে ফলপ্রসূ ও অধিক কার্যকর উপায়। সাইটের মাধ্যমে প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা সারা বিশ্বের কোটি কোটি পাঠকের দুয়ারে পৌঁছে দেয়া যায়। মুসলিম ও অমুসলিম সবাই এ থেকে উপকৃত হতে পারে। ইসলামী যে কোনো জিজ্ঞাসার জবাব প্রদানের মাধ্যমেও দীনের বিশাল খেদমত আঞ্জাম দেয়া সম্ভব একটি সাইটের মাধ্যমে। সৌদি আরবের একটি ওয়েব সাইট islamhouse.com এর কথাই বলি। বিশ্বের প্রায় আশিটি ভাষায় এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সারা বিশ্বে বাংলায় এর প্রায় ৯০ লাখ ব্রাউজার রয়েছে। আল-সুন্নাহ নামের (www.alssunnah.com) একটি ইসলামী সাইটের পরিচালনা বোর্ডের বক্তব্য এমন : ‘আমরা এ সাইটে ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী অনেক অমুসলিমের চিঠি পাই। তারা জানতে চান কীভাবে ইসলামে দাখিল হতে হয়, এর পদক্ষেপগুলো কী কী ইত্যাদি। তেমনি দীনী জিজ্ঞাসার জবাব ও জীবন ঘনিষ্ঠ সমস্যার সমাধান জানতে চান আগ্রহী মুসলিমরা। পর্যাপ্ত শরঈ জ্ঞান ও বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী একদল কল্যাণব্রতী নিষ্ঠাবান যুবকের মাধ্যমে এসব পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সব ভাষায়ই আমরা এর কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

    এই মাধ্যমটির গুরুত্ব এখানেও নিহিত যে, সাইটটি হতে পারে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের অতি সমৃদ্ধ এক বিশাল লাইব্রেরি, যা নানা ভাষায় কোটি কোটি মানুষ নিখরচায় পড়তে পারবে। পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে যে কোনো সময় সেখানে প্রবেশ করা যাবে। কয়েকটি দৃষ্টান্ত আমাদের পথ দেখাবে পারে। যেমন : একটি সাইটে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার হাদিস আপলোড করে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি সাইটে পবিত্র কুরআনের অনুবাদ দেয়া হয়েছে সাতটি ভাষায়। আরেক সাইটে সৌদি আরবের ‘উচ্চতর ফতোয়া বোর্ডে’র চার হাজার ফতোয়া তুলে ধরা হয়েছে। অপরএক সাইটে বিভিন্ন ভাষায় প্রাজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য আলিমদের নয়শ ইসলামী সিডি উপস্থাপন করা হয়েছে।

    ইন্টারনেটে অনেক কোম্পানির সন্ধান পাওয়া যায় যারা ফ্রি ডোমেইন দিয়ে থাকে। এসবের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় সাইট http://www.hypermart.net/। এ ধরনের যে কোনো জনপ্রিয় সাইটে ঢুকে আপনিও নিজের নামে একটি সাইট খুলতে পারেন। একটি দাওয়াতী পেজ খোলার জন্য আগ্রহী ব্যক্তিকে শুধু শিখতে হবে ‘ফ্রন্ট পেজ’ অথবা ওয়ার্ড ২০০০ এ কীভাবে পেইজ ক্রিয়েট করতে হয়। জানতে হবে কীভাবে নিজের সাইটটিকে কম্পিউটার থেকে ইন্টানেটে ওঠাবেন। আর এগুলো খুব সহজ কাজ। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না।

    উল্লেখ্য, উপরোক্ত সাইটটি বর্তমানে ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, বসনীয়, আলবেনি, মালয়, ইন্দোনেশি, ফিলিপাইনি ও ফিনল্যান্ডিয়ান ভাষায় পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে নতুন আরও ছয়টি ভাষা সংযোজনের কাজ চলছে। সেগুলো হলো, হিন্দি, বাংলা, সিংহলিজ, তেলেগু, মালায়ালম ও তামিল ভাষা।

    দ্বিতীয়. অনলাইন চ্যাটের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা

    এটি একটি উত্তম উপায়। এর কার্যকারিতাও অনেক বেশি। শুধু এ তথ্য জানানোই যথেষ্ট হতে পারে যে, উল্লেখিত সাইটের একজন দা‘ঈর হাতে অল্প সময়ে বিভিন্ন জাতি ধর্মের বিশ নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন এই অনলাইন চ্যাটের মাধ্যমে। এই চ্যাট বা আড্ডা হতে পারে কয়েক পদ্ধতিতে :

    ক. সরাসরি আলোচনা (Direct dialogue) :

    এটি সম্ভব Mirc প্রোগ্রাম (http://www.mirc.com/) বা ICQ কিংবা ইয়াহু মেসেঞ্জার, গুগলটক বা ফেসবুক ইত্যাদি প্রোগ্রামের সাহায্যে। দীনের পথে মানুষকে আহ্বানকারী ব্যক্তি এসবের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিংবা ব্যক্তিগত বা বিশেষ ব্যবস্থায় চ্যাট করতে পারেন। বাংলা ভাষায় এ মাধ্যমটিকে দাওয়াতের কাজে লাগানোর ঘটনা বিরল হলেও বিশ্বের বহুল প্রচলিত ভাষা যেমন ইংরেজি ও আরবিতে এ পদ্ধতি অনেক সুফল বয়ে আনছে। কতজন যে এভাবে তাদের দীনী জ্ঞানের পিপাসা নিবারণ করেছেন আর কতজন যে মানুষকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। ভুরি ভুরি ঘটনার মধ্যে এখানে মাত্র একটি তুলে ধরা যাক :

    ‘আমি একটি চ্যাট রুমে ছিলাম। সেটি ছিল অমুসলিমদের দাওয়াত দেয়ার বিশেষ রুম। রুমটিতে আমি একাই ছিলাম। কথা বলতে বলতে আমি বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। অন্য কেউ সেখানে আসা পর্যন্ত আমি নিজেকে উপকারী অন্য কাজে নিয়োজিত করলাম। ইতোমধ্যে চ্যাট রুমে একজন যুবক প্রবেশ করল। সে আমার সহযোগিতা চাইলো। বলাবাহুল্য, আমি তখন পর্দায় অনুপস্থিত। সঙ্গত কারণেই তার ডাকে সাড়া দেয়া হয়নি। তিনিও তখন অন্যমনস্ক হলেন। কিছুক্ষণ পরেই আবার ফিরে এলেন। আবার সহযোগিতা চাইলেন এবং ফিরে গেলেন। ব্যাপার হলো, আমি যখন পর্দায় লক্ষ্য করলাম, লোকটির রিকোয়েস্ট ও অনুনয় দেখতে পেলাম। তবে তা সময় পেরিয়ে যাবার পর। সহজেই আমি তাকে অন্য চ্যাট রুমে খুঁজে বের করতে সক্ষম হলাম। আমি তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। তাকে বললাম, দয়া করে বলুন। আপনি কি চান আমি আপনাকে সহযোগিতা করি? এতে তিনি অত্যধিক খুশি হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি মুসলিম? উত্তর দিলাম, জী, আলহামদুলিল্লাহ। এতে তার খুশির মাত্রা বেড়ে গেল।

    তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি একজন আমেরিকান। বয়স আমার ৩৬ বছর। ধর্মতত্ত্ব বিভাগ থেকে আমি মাস্টার্স করেছি। চাইলেই আমি পাদ্রী হতে পারি। কিন্তু একটি বাস্তবতা আমার শান্তি কেড়ে নিল। যখনই আমি নিজ ধর্মের গভীরে যাই, আমার সন্দেহ বেড়ে যায়। আমার ভেতরে আমি গভীর বৈপরীত্য অনুভব করি। তখন আমি খ্রিস্ট ধর্ম ছাড়া অন্যান্য ধর্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম। এমন কোনো বহুল আচরিত ধর্ম বিশ্বাস বাদ রাখলাম না, যার সম্পর্কে জালনাম না বা যা নিয়ে কিছু পড়লাম না। এভাবেই আমি ইসলামকে পেয়ে গেলাম। ইসলাম সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করলাম। অনুবাদ পড়ে আমি কুরআনও খতম করলাম। অবশেষে আমি স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে এটিই আল্লাহ প্রদত্ত সত্য ধর্ম। এটিই ফিতরাত ও প্রকৃতির ধর্ম।’ ‘আমার আবেদন হলো, আপনাদের ধর্মে কি আমাকে গ্রহণ করবেন? আমি কিভাবে ইসলামে দাখিল হবো? ইসলাম গ্রহণে আমাকে কী কী পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে? ’

    সত্য কথা কী ভদ্রলোকের সঙ্গে আমি যখন কথা বলছিলাম রাত বাজে তখন ২টা। তন্দ্রার প্রভাবে আমি নিজের হাতদুটিও দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু যখন লোকটির এসব কথা পড়লাম। মুহূর্তেই আমার নিদ্রা ছুটে পালালো। আমি তাকে বললাম, আপনি সুস্বাগত হে আমার নতুন ভাই। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। ব্যাপারটি একেবারে সহজ। আপনার প্রথম প্রশ্ন ছিল আপনাকে আমরা গ্রহণ করব কি-না? এর জবাবে বলি, আমাদের ধর্মে এর সুস্পষ্ট জবাবই রয়েছে। সেটা হলো, ‘হাইয়াকাল্লাহ’ তথা স্বাগতম আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আল্লাহ তা‘আলা তার দিকে এক হাত অগ্রসর হন। আর আপনি জানতে চেয়েছেন কীভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে হয়। এর উত্তর হলো, আপনাকে এজন্য তেমন কিছু করতে হবে না; শুধু আমি যা লিখি তা নিজের মুখ ও মন থেকে আবৃত্তি করবেন। আমি কালেমায়ে শাহাদাত লিখলাম এবং ইংরেজিতে তার অর্থও লিখে দিলাম। এরপর একজন সদ্য ইসলামে দাখিল ব্যক্তির জন্য গোসল, মাথা মুণ্ডানো এবং নাপাক লেগে থাকলে পোশাক পরিবর্তনসহ যা কিছুর দরকার হয় লিখলাম।

    এসব শুনে ভদ্রলোক খুশিতে আটখানা হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে শাহাদাহ পাঠ ও ঈমানের ঘোষণা দিলেন। অতপর তিনি একটি ইসলামিক সেন্টারে গেলেন। সেন্টারের লোকেরা তাকে আরও অনেক কিছু শেখালেন। পরে তিনি আমাকে একটি পত্র লিখেন। তাতে তিনি নিজের নতুন নাম জানান ঈমান আসাদ। তারপর থেকে আমাদের মাঝে নিয়মিত মেইল বিনিময় হয়। আলহামদুলিল্লাহ এমন আরও ঘটনা আমার সঙ্গে এবং আমার অন্য দাঈ ভাইদের সঙ্গেও ঘটেছে।

    খ. পরোক্ষ আলোচনা (Indirect dialogue) : ইন্টারনেটের সাহায্যে অন্যের সঙ্গে পরোক্ষভাবে আলোচনার ভিন্ন ভিন্ন দুটি উপায় রয়েছে :

    ১. সংলাপ প্রাঙ্গন বা Message Boards- এর সাহায্যে অন্যের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা জনপ্রিয় সব সার্চ ইঞ্জিনেই এ সেবা রয়েছে। যেমন : গুগল, ইয়াহু, এমএসএন, বিং, ডগ পাইল, আস্ক ডট কম ইত্যাদি। এসব সাইটে কোটি কোটি মানুষ দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কে তাদের বিচিত্র ভাবনা বিনিময় করেন। গণমানুষের মধ্যে মিশে যেতে এবং নানা ধর্ম ও মতের মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতে এ এক আদর্শ ময়দান। চাইলে এ লিংকে একটি মাত্র ক্লিক করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। আপনিও পারেন আল্লাহর পথে দাঈ হয়ে যেতে : http://messages.yahoo.com/index.html

    ২. নিউজ গ্রুপস- এর সাহায্যে অন্যের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা। এসব মূলত আনলিমিটেড স্পেসজুড়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা, সংলাপ ও বিতর্কের গ্র“প। বিশেষত এখানে সব ধর্ম, চিন্তা ও মতবাদের লোকেরা সবিস্তারে ধর্মীয় দিক আলোচনার করতে পারেন। এ অঙ্গনে অসংখ্য দিশেহারা ও পথভ্রষ্ট লোক হিদায়াতের আলো নিয়ে মতবিনিময় করে। তেমনি অনেক অমুসলিম এখানে তাদের সব ধরনের কুৎসা ও কৌশল ব্যবহার করে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের ওপর আক্রমণ চালায়। আলহামদুলিল্লাহ এখানে অনেক ভালো লোকও রয়েছেন যারা অঙ্গনটিকে কাজে লাগাতে অনেক কষ্ট স্বীকার করেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তাদের সংখ্যা অনেক কম।

    এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে এই গ্রুপগুলোর কাছে পৌঁছা যাবে? হ্যা, এসব গ্রুপের কাছে পৌঁছার দু’টি পন্থা রয়েছে।

    ১. প্রত্যেক সার্চ ইঞ্জিনেরই যেমন মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার রয়েছে একটি মেইলিং প্রোগ্রাম এবং আরেকটি প্রোগ্রাম নিউজের। সেটির কথাই বলা হচ্ছে এখানে। এ প্রোগ্রাম এ্যাকটিভ করার মাধ্যমেই আপনি এসব গ্রুপের কাছে পৌঁছতে পারবেন।

    ২. এসব গ্রুপের কাছে পৌঁছার দ্বিতীয় পন্থা হলো এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করা। যার এড্রেস হলো : http://www.deja.com/। এই সাইটটির মাধ্যমে আপনি এসব গ্রুপের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। এসবের আলোচনার শিরোনাম খুঁজে নিতে পারবেন। তারপর ইচ্ছে মতো বিষয়ে মানুষের আলোচনার মধ্যে ঢুকে যেতে পারবে।

    তৃতীয়. আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকার জন্য ই-মেইল ব্যবহার করা :

    অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় এটি পূর্ণাঙ্গ ও চমৎকার মাধ্যম। এটি দাঈ ও আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের জন্য টার্গেট জনগোষ্ঠীর পৌঁছার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। এ মাধ্যমটি কাজে লাগানোর কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে:

    ১. প্রচলিত পন্থায় ই-মেইলের মাধ্যমে পত্রবিনিময় : টার্গেট মানুষদের কাছে পৌঁছুনো, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ইসলাম সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা খুঁজে পেতে এ এক চমৎকার মাধ্যম। উপরে উল্লেখিত আল-সুন্নাহ সাইটের মাধ্যমে ইসলামগ্রহণকারীদের অধিকাংশই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এ ই-মেইল পদ্ধতির সাহায্যে।

    ২. ইন্টারনেটে অনেক কোম্পানির সন্ধান পাওয়া যায় : এরা যুক্তিসঙ্গত মূল্যে মেইলিং সেবা দিয়ে থাকে। এসব কোম্পানির কাছে রয়েছে মেইল এড্রেসের বিশাল তালিকা। এদের কারো কারো রয়েছে পাঁচ/ছয় কোটি মেইল এড্রেস। এসব কোম্পানির সঙ্গে দাঈ ও মুবাল্লিগগণ নির্দিষ্ট এমাউন্টের বিনিময়ে চুক্তিতে পৌঁছতে পারবেন। চল্লিশ পঞ্চাশ ডলার দিয়ে আপনি পাঁচ মিলিয়ন এড্রেস পেতে পারেন। সদ্ব্যবহার করতে পারলে, ভালোমত কাজে লাগাতে পারলে, সুন্দর বাক্য ও সুবচন চালিয়ে যেতে পারলে এটি একটি উত্তম মাধ্যম। বিশেষত আলোচনার বিষয় বা Subject হওয়া চাই চিত্তাকর্ষক। তবে দেখে নিতে হবে কোম্পানিটি এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কি-না যাতে তারা কোনো ভুল ঠিকানা সরবরাহ না করে।

    ৩. নিজেই একটি মেইলিং তালিকা প্রস্তুত করা : এটি হলো একজন দাঈ নিজেই একটি মেইলিং তালিকা প্রস্তুত করবেন যেখানে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের মেইল এড্রেস থাকবে। তালিকাটা যত বড় হবে ততই ভালো। এ পদ্ধতিতে দাঈ ব্যক্তি টার্গেট জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তার ফলপ্রসূ চিঠি এবং উপকারী উপদেশ বিনিময়ের করবেন। এতে করে লোকেরা উপকৃত হবে। মৌসুম ও দিবস বিবেচনায় আলোচনার বিষয়বস্তু বিভিন্ন রকম হবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, সৌদি আরবের এক ভাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি তালিকা অতি সম্প্রতি একটি মেইলিং তালিকা করেছেন যাতে দশ হাজারের অধিক ব্যক্তির এড্রেস রয়েছে। তাঁর এ উদ্যোগের সুবাদে আল্লাহ তা‘আলা অনেক মুসলিম ও অমুসলিমের হিদায়াত নসীব করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন। ওই ভাইয়ের এড্রেসটির নাম ‘ই-গ্রুপস কোম্পানি’। প্রকৃতই সেটি বর্তমানে এ অঙ্গনের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। নিচে তাঁর এড্রেস লিংক দেয়া হলো। চাইলে আপনি এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন : http://www.egroups.com/group/daleel। আমি নিজেও একটি তালিকা প্রণয়ন করেছি যেখানে কয়েক হাজার ব্যক্তির ই-মেইল এড্রেস সংগ্রহ করা হয়েছে।

    ইন্টারনেটে ভবিষ্যৎ ইসলামের ওপর ভ্রান্ত ফেরকাগুলোর সাইটের প্রভাব কী

    বর্তমানে ইন্টারনেটে সবচে ভয়ঙ্কর বিপদ এবং বড় আশঙ্কাজনক দিক হলো অনেকগুলো ভ্রান্ত দলের আত্মপ্রকাশ, যারা ইসলামকে তুলে ধরার নামে দীন সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মুসলিম এবং সত্য ধর্ম সন্ধানী, ইসলামের সঠিক পরিচয় প্রত্যাশী ভাই-বোনদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। হায় অনুভূতি, সত্বরই এরা কী পড়বে আর অচিরেই এরা কী দেখবে?!

    আল-সুন্নাহ সাইটের এক দাঈ‘র ঘটনা। তিনি একদিন একটি চ্যাট রুমে বসা ছিলেন। তখন তাকে এক যুবক আহমদিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এটি এমন জামাত সারা বিশ্বের আলিমগণ যাদের কাফের ফতোয়া দিয়েছেন। ইন্টারনেটে এদের ব্যাপক প্রোপাগান্ডা রয়েছে। তিনি তার জবাবে ব্যাপক উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের কাফের হবার বিষয়টি তুলে ধরলেন। যুবকটি তার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে, যা তার অজ্ঞাত ছিল। কয়েকদিন ধারাবাহিক আলোচনার পর তিনি জানতে পারেন যুবকটি তুরস্কের একজন সুন্নী মুসলিম। ভ্রান্ত আমহদিয়া সম্প্রদায়ের একটি ওয়েবসাইট থেকে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ, তার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তিনি এর ভয়াবহতা ও ঈমান বিধ্বংসী দিক বুঝতে সক্ষম হন। এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে তাওবা করেন। যুবকটি আজও তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে।

    যুব সম্প্রদায়ের প্রতি বিনীত আবেদন

    যুবক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা এই আধুনিক প্রচার মাধ্যমটিকে উত্তম কাজে লাগান। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে লগ্নি করুন এবং আল্লাহর হারাম করা বিষয়গুলো থেকে সর্বাত্মকভাবে বিরত থাকুন। বিশেষত আজ যখন তা মানুষের জন্য বিপদের আকার ধারণ করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে ইন্টারনেট একটি দোধারী অস্ত্র। আমাদের তাই মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকা এবং নিজের আখলাক ও আচরণ দিয়ে ইসলামের সঠিক চিত্র তুলে ধরার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ইসলামগ্রহণকারী অনেক ব্যক্তির খবর নিলে জানা যায়, তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনছে দেখা যায়, তাদের ইসলাম গ্রহণের কোনো মুসলিম যুবক বা যুবতীর অবদান রয়েছে যিনি তার সামনে ইসলামের আচার-শিষ্টাচার ও বিধান-সংবিধানের সঠিক চিত্র চিত্তাকর্ষক ভাষায় তুলে ধরেছেন। মনে রাখতে হবে মুখের ভাষায় দাওয়াতের চেয়ে কর্ম ও আচরণের মাধ্যমে দেয়া দাওয়াতই বেশি কার্যকর হয়।

    প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা কি ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াতে দীনের যিম্মাদারী আদায় করতে চান? আপনার জন্য প্রতিদান ও অফুরন্ত নেকী হিসেবে সে ওয়াদাগুলোই যথেষ্ট যা মহা সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ থেকে বের হয়েছে। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى ، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنِ اتَّبَعَهُ ، لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا ، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ ، فَعَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنِ اتَّبَعَهُ ، لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا»

    ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের প্রতি (মানুষকে) আহ্বান জানাবে, যারা তার অনুসরণ করবে তাদের অনুরূপ নেকীই লেখা হবে ওই ব্যক্তির জন্য। অথচ এটি তাদের নেকীর কোনো অংশ কমিয়ে দেবে না। আর যে কোনো ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান জানাবে, তাকে যারা অনুসরণ করবে তাদের সমান পাপই লেখা হবে তার জন্য। অথচ এটি তাদের পাপসমূহ থেকে এতটুকু কমাবে না। [ইবন মাজা : ২০৩; দারেমী : ৫৩০]

    সাহল ইবন সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ»

    ‘আল্লাহর শপথ, ‘তোমার মাধ্যমে একজনকে আল্লাহর হেদায়েত দান করা তোমার জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম।’ [বুখারী : ৪২১০; মুসলিম : ৬৩৭৬]

    আপনি কি চান না আল্লাহর রহমত আপনাকে বেষ্টন করে নিক? তবে আপনার জন্য দাওয়াতের পথ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

    ﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ﴾ [التوبة : 71]

    ‘আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়িম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৭১}

    আপনাদের সামনে ইন্টারনেটে দাওয়াত প্রচারের কিছু কৌশল ও টিপস তুলে ধরতে চাই। সেগুলোকে কাজে লাগান। শয়তান যেন দীনের স্বার্থ হাসিল থেকে আপনাকে বিরত না রাখতে পারে। মনে রাখবেন, ইন্টারনেটে আপনি যত সময় দিচ্ছেন, কিয়ামতের দিন এ সময়গুলোর হিসাব দিতে হবে। কোথায় এগুলো কাটিয়েছেন? ভালো কাজে কাটালে ভালো আর মন্দ কাজে কাটালে মন্দ বয়ে আনবে। ইন্টারনেটে ভালো কাজ করতে পারেন এভাবে :

    প্রথমত. বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে :

    ১. নতুন ইসলামী সাইটের ঠিকানা এবং এর শরয়ী বিষয় ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো প্রচার করা।

    ২. বিভিন্ন উপলক্ষে সমৃদ্ধ কোনো ইসলামী সাইটের বিভিন্ন কনটেন্ট (বিষয়সূচি) প্রচার করা (যেমন হজের মাসে হজের সাইট তুলে ধরা, রমযান মাসে রমযান সংশ্লিষ্ট লেখা তুলে ধরা ইত্যাদি)

    ৩. নতুন সাইটের নতুন নতুন বিষয়গুলো পুরো লিংকসহ প্রচার করা।

    ৪. নতুন প্রবন্ধ দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ।

    ৫. নবাগত ভালো লেখকদের মন্তব্য জানিয়ে উৎসাহ প্রদান করা।

    ৬. নির্দিষ্ট বিষয়ের সকল লিংক জমা করে দেয়া, যেগুলোর প্রয়োজন হয়।

    ৭. যে ইবাদত সামনে আসছে মানুষকে তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। যেমন আশুরার সাওম, আইয়াম বিযের সাওম ইত্যাদি।

    ৮. চলমান ইস্যুগুলো সংশ্লিষ্ট ফিকহী দিকগুলো মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।

    ৯. মানুষকে বিদআত, নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ থেকে সতর্ক করা।

    ১০. নির্দিষ্ট কোনো হারাম কাজ নির্মূলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং তা নির্মূলের চেষ্টা করা।

    ১১. জনকল্যাণমূলক কাজে মানুষকে পথ দেখানো। যেমন কোনো সংস্থা বা সংগঠনের কোনো প্রজেক্টের কথা প্রচার করা।

    ১২. বিপদগ্রস্ত মানুষের আশু সাহায্যের আবেদন প্রচার করা যেমন কারো এমন রক্তের প্রয়োজন যার গ্র“প সহজে পাওয়া যায় না।

    ১৩. মানুষকে সুসংবাদ দেয়া এবং মুসলিমদের সুখবর পৌঁছানো।

    ১৪. মিথ্যা খণ্ডন করা এবং ইসলামের অপপ্রচারের জবাব দেয়া।

    ১৫. দাওয়াতী কাজে সহযোগিতার আবেদন প্রচার করা।

    দ্বিতীয়ত. দাওয়াতী সাইটে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে :

    অনেক ইসলামী সাইট রয়েছে যেগুলো আমরা ব্রাউজ করি এবং সেসব থেকে তথ্য পেয়ে প্রতিনিয়ত আমরা উপকৃত হই। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি এ সাইটগুলো আমাদের কত উপকার করছে, আমাদের ব্রাউজটা হতে পারে তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক যদি আমরা তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করি। আর তা হতে পারে কয়েকভাবে :

    1. ব্রাউজের মন্তব্যের জায়গায় কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমে সাইট বা সাইটের সেরা দিক নিয়ে প্রশংসাসূচক বা ধন্যবাদজ্ঞাপক কিছু লেখা।
    2. সাইট কর্তৃপক্ষকে সুন্দর পরামর্শ দিয়ে কিংবা গঠনমূলক সমালোচনা করে অথবা সাইটের সমৃদ্ধি বা উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য নতুন কোনো পরামর্শ দেয়া এবং সাইটের কারিগরি ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দেয়া।
    3. সাইটের নানা কার্যক্রমে অংশ নেয়া। কেবল নিজের সাইট করতে দীন প্রচার করতে হবে না ভেবে নিজের রচনা ও লেখা দিয়ে অন্য সাইটগুলোকেও সহযোগিতা করা।
    4. সাইট সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য ও অভিজ্ঞতা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শেয়ার করা।
    5. নিজের বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের কাছে সাইটের এড্রেস ও লিংক পাঠিয়ে ইসলামী সাইটের প্রচার বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য, ইসলামী সাইটের সংখ্যা বর্তমানে একেবারে নগন্য নয়; কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো আমরা প্রচারে দুর্বল।
    6. নিউজ গ্রুপগুলোতে সাইটের কথা তুলে ধরা।
    7. নিজের সাইটে, কর্মক্ষেত্রে বা গাড়িতে ইসলামী সাইটের এড্রেসের স্টিকার লাগিয়ে দেয়া।
    8. ইসলামী সাইটগুলোয় মানহানীকর প্রশ্ন করে বা উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনা বিরক্ত উদপাদন না করা।

    তৃতীয়ত. ব্যক্তিগত সাইটের লোকদের ভুল শুধরে দেয়ার মধ্য দিয়ে :

    আপনি হয়তো কারও ব্যক্তিগত সাইটে ঢুকলেন। সেখানে হয়তো অনৈসলামি পোস্ট ও পিকচারের সমাহার দেখলেন। এখন আপনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে মেইল করে বা সাইটের কর্তপক্ষের কাছে সাইটের ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করার পর মন্দ বিষয়গুলো পরিহারের আহ্বান জানানোর জন্য শুভকামিতা দেখাতে পারেন। তাদের ভালো সাইটের এড্রেস এবং ভালো আইডিয়া দিতে পারেন।

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকল সম্ভাব্য সকল উপায়ে তাঁর দীনের প্রচারে কাজ করার তাওফীক দান করেন। আমাদের মেধা, মনন ও সুযোগগুলোকে ইসলামের খেদমতের জন্য কবুল করেন। আমাদেরকে প্রযুক্তির মন্দ ও ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে হেফাযত করেন। আমীন।