×
বিয়ে : করণীয় ও বর্জনীয়, বক্ষমাণ নিবন্ধে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিয়ের করণীয় ও বর্জনীয় দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

    বিয়ে : করণীয় ও বর্জনীয়

    [বাংলা - bengali - البنغالية]

    সংকলক: আলী হাসান তৈয়ব

    সম্পাদনা : মো: আব্দুল কাদের

    2011- 1432

    ﴿ الزفاف: آدابه ومنكراته ﴾

    « باللغة البنغالية »

    علي حسن طيب

    مراجعة: محمد عبد القادر

    2011 - 1432

    বিয়ে : করণীয় ও বর্জনীয়

    আলী হাসান তৈয়ব

    মানব জীবনে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে মানুষকে দায়িত্ববান বানায়। জীবনে আনে স্বস্তি ও প্রশান্তি। বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষ সক্ষম হয় যাবতীয় পাপাচার ও চারিত্রিক স্খলন থেকে দূরে থাকতে। অব্যাহত থাকে বিয়ের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ধারা। বৈধ ও অনুমোদিত পন্থায় মানুষ তার জৈবিক চাহিদা মেটায় কেবল এ বিয়ের মাধ্যমে। এককথায় বিয়েতে রয়েছে প্রভুত কল্যাণ ও অননুমেয় উপকারিতা। বিয়ের বিবিধ কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা তাই ইরশাদ করেন,

    وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

    'আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।'[1]

    বিয়ের সঙ্গে পৃথিবীতে মানুষের বংশ ধারার সম্পর্ক নির্দেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    تَزَوَّجُوا الْوَلُودَ الْوَدُودَ ، فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمْ الأَنْبِيَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

    'তোমরা অধিক সন্তানদানকারী স্বামীভক্ত নারীদের বিয়ে করো। কেননা কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের (সংখ্যা) নিয়ে নবীদের সামনে গর্ব করবো।'[2]

    সুতরাং বলাবাহুল্য যে, বিয়ে করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। অতএব, কেউ যখন বিয়ে করবেন তার উচিত বিয়ের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা অর্জন করা।

    ক. বিয়ের করণীয় বিষয়সমূহ :

    ১- বাসর ঘরে স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে ডান হাত রাখা এবং দু'আ পড়া :

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    إِذَا أَفَادَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً أَوْ خَادِمًا أَوْ دَابَّةً فَلْيَأْخُذْ بِنَاصِيَتِهَا وَلْيُسَمِّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ.

    'তোমাদের কেউ যখন কোনো নারী, ভৃত্য বা বাহন থেকে উপকৃত হয় (বিয়ে বা খরিদ করে) তবে সে যেন তার মাথার অগ্রভাগ ধরে, বিসমিল্লাহ পড়ে এবং বলে :

    اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ.

    ('হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এর ও এর স্বভাবের কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং এর ও এর স্বভাবের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)'[3]

    ২- স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একসঙ্গে দুই রাকা‌‘‌ত সালাত আদায় করা :

    আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে, স্বামী তখন দাঁড়িয়ে যাবে। আর স্ত্রীও দাঁড়িয়ে যাবে তার পেছনে। অতপর তারা একসঙ্গে দুই রাকা‌‘‌ত সালাত আদায় করবে এবং বলবে :

    اللَّهُمَّ بَارِكْ لِي فِي أَهْلِي، وَبَارِكْ لَهُمْ فِيَّ، اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي مِنْهُمْ وَارْزُقْهُمْ مِنِّي، اللَّهُمَّ اجْمَعَ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ إِلَى خَيْرٍ، وَفَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ.

    'হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন আর আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। আয় আল্লাহ, আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযক দিন আর আমার থেকে তাদেরও রিযক দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্র রাখুন আর আমাদের মাঝে যখন বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবেন তখন কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটাবেন।'[4]

    ৩- স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের দু‘আ পড়া।

    স্ত্রী সহবাসকালে নিচের দু'আ পড়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَأْتِيَ أَهْلَهُ فَقَالَ بِاسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ، فَإِنَّهُ إِنْ يُقَدَّرْ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ فِي ذَلِكَ لَمْ يَضُرُّهُ شَيْطَانٌ أَبَدًا.

    'তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী সঙ্গমকালে বলে :

    بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

    (আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তানের কাছ থেকে দূরে রাখুন আর আমাদের যা দান করেন তা থেকে দূরে রাখুন শয়তানকে।) তবে সে মিলনে কোনো সন্তান দান করা হলে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।'[5]

    ৪- নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত থাকা :

    আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    مَنْ أَتَى حَائِضًا ، أَوْ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا ، أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

    'যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পেছনপথে সঙ্গম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করলো।'[6]

    ৫- ঘুমানোর আগে অযূ বা গোসল করা :

    স্ত্রী সহবাসের পর সুন্নত হলো অযূ বা গোসল করে তবেই ঘুমানো। অবশ্য গোসল করাই উত্তম। আম্মার বিন ইয়াসার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    ثَلاَثَةٌ لاَ تَقْرَبُهُمُ الْمَلاَئِكَةُ جِيفَةُ الْكَافِرِ وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوقِ وَالْجُنُبُ إِلاَّ أَنْ يَتَوَضَّأَ.

    'তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না : কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র শরীরবিশিষ্ট ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে অযূ করে।'[7]

    ৬- ঋতুবতীর স্ত্রীর সঙ্গে যা কিছুর অনুমতি রয়েছে :

    হ্যা, স্বামীর জন্য ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে যোনি ব্যবহার ছাড়া অন্য সব আচরণের অনুমতি রয়েছে। স্ত্রী পবিত্র হবার পর গোসল করলে তার সঙ্গে সবকিছুই বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    اصْنَعُوا كُلَّ شَيْءٍ إِلاَّ النِّكَاحَ .

    '... সবই করতে পারবে কেবল সঙ্গম ছাড়া।'[8]

    ৭- বিয়ের নিয়ত শুদ্ধ করা :

    নারী-পুরুষের উভয়ের উচিত বিয়ের মাধ্যমে নিজকে হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানোর নিয়ত করা। তাহলে উভয়ে এর দ্বারা ছাদাকার ছাওয়াব লাভ করবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةً ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ ، وَيَكُونُ لَهُ فِيهِ أَجْرٌ ؟ قَالَ : أَرأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي الْحَرَامِ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ ؟ فَكَذَلَكَ إِذا وَضَعَهَا فِي الْحَلالِ كَانَ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ.

    'তোমাদের সবার স্ত্রীর যোনিতেও রয়েছে ছাদাকা। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের কেউ কি তার জৈবিক চাহিদা মেটাবে আর তার জন্য সে কি নেকী লাভ করবে? তিনি বললেন, 'তোমরা কি মনে করো যদি সে ওই চাহিদা হারাম উপায়ে মেটাতো তাহলে তার জন্য কোনো গুনাহ হত না? (অবশ্যই হতো) অতএব তেমনি সে যখন তা হালাল উপায়ে মেটায়, তার জন্য নেকী লেখা হয়।'[9]

    ৮- স্ত্রী সান্বিধ্যের গোপন তথ্য প্রকাশ না করা :

    বিবাহিত ব্যক্তির আরেকটি কর্তব্য হলো স্ত্রী সংসর্গের গোপন তথ্য কারো কাছে প্রকাশ না করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِى إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِى إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا.

    'কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তি সবচে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে যে তার স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয় এবং স্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ হয় অতপর সে এর গোপন বিষয় প্রচার করে।'[10]

    ৯- অলীমা করা :

    বিয়ের আরেকটি সুন্নত হলো অলীমা করা তথা মানুষকে দা‘ওয়াত করে খাওয়ানো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এমনকি তিনি আবদুর রহমান বিন আউফ রাদিআল্লাহু আনহু -এর উদ্দেশে বলেন,

    أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ.

    'অলীমা কর, হোক না তা একটি ছাগল দিয়ে হয়।'[11]

    ১০- বিয়ের দা‘ওয়াত গ্রহণ করা :

    কেউ যদি বিয়ের দা‘ওয়াত দেয় তাহলে সে দা‘ওয়াত কবুল করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْوَلِيمَةِ فَلْيَأْتِهَا.

    'তোমাদের কাউকে যখন বৌভাতের দাওয়াত দেয়া হয়, সে যেন তাতে অংশ নেয়।'[12]

    অপর এক হাদীসে তিনি বলেন,

    وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ.

    'আর যে দাওয়াত কবুল করল না সে যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যাচরণ করল।'[13]

    ১১- নব দম্পতির জন্য দু‘আ করা :

    নব দম্পতির জন্য নিচের দু'আ করা সুন্নত। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যখন কোনো ব্যক্তি বিবাহ করত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,

    بَارَكَ اللَّهُ لَكَ ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ.

    'আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন এবং তোমাদের উভয়েক কল্যাণে মিলিত করুন।'[14]

    ১২- নির্দোষ সঙ্গীত ও দফ বাজানো :

    বিয়ের ঘোষণার স্বার্থে শুধু দফ বাজানো এবং নির্দোষ সঙ্গীত গাওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে সে সঙ্গীতে রূপের বর্ণনা কিংবা অবৈধ কিছুর আহ্বান না থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    فَصْلُ مَا بَيْنَ الْحَلالِ وَالْحَرَامِ الصَّوْتُ، وَضَرْبُ الدُّفِّ.

    'হালাল ও হারাম বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কেবল ঘোষণা ও দফ বাজানো।'[15]

    খ. বিয়েতে বর্জনীয় বিষয়সমূহ :

    ১- আংটি পরানো :

    আজকাল মুসলিমের বিয়ের মধ্যে অমুসলিমদের মতো আংটি বদলের রীতি ঢুকে পড়েছে। শাইখ আলবানী রহ. 'আদাবুয যিফাফ' গ্রন্থে বলেন, 'এতে মূলত কাফেরদের অন্ধানুকরণই প্রকাশ পায়। কেননা তা খ্রিস্টানদের সনাতন রীতি।

    ২- অপচয় করা এবং আভিজাত্য জাহির করা :

    অনেককেই দেখা যায় বিয়েতে বাগাড়ম্বর ও অপচয় দেখাতে গিয়ে নিজের কাঁধে ঋণের বিশাল বোঝা তুলে নেন। আর তা করা হয় বিচিত্র উপায়ে। যেমন :

    ক. বিয়ের জন্য দামী দাওয়াত কার্ড ছাপা।

    খ. হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা।

    গ. শুধু বিয়ের জন্য বাহারী পোশাক খরিদ করা, যা পরে কখনো গায়ে দেয়া হয় না।

    ঘ. খাবারে অপচয় করা, খাদ্য নষ্ট করা, ফেলে দেয়া ইত্যাদি। বস্তুত মেহমানদের সম্মানের খাতিরে নয় এসব করা হয় মূলত বিত্ত ও আভিজাত্য প্রকাশের জন্য।

    ঙ. বিয়ের অনুষ্ঠানে নর্তকীদের পায়ের নিচে প্রচুর অর্থ ঢালা। অথচ অনেক মুসলমান না খেয়ে মরছে।

    চ. পোশাক-আশাকের পেছনে মেয়েদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করা। মানুষকে দেখানোর জন্য বিয়ে অনুষ্ঠানে বারবার দামী কাপড় বদলানো।

    প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এসব কাজ থেকে একটু বিরত হোন। নিজেকে রক্ষা করুন এবং আল্লাহ হিসাব নেয়ার আগে নিজে নিজের হিসাব নিন। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَا فَعَلَ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَا أَنْفَقَهُ وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ.

    'কিয়ামতের দিন কোনো বান্দার পা নড়বে না যাবৎ না তাকে প্রশ্ন করা হবে তার হায়াত সম্পর্কে : কোন কাজে তা ব্যয় করেছে, জিজ্ঞেস করা হবে তার ইলম সম্পর্কে : তার কতটুকু আমল করেছে, প্রশ্ন করা হবে তার সম্পদ বিষয়ে : কোত্থেকে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা খরচ করেছে এবং জিজ্ঞেস করা হবে তারা দেহ সম্পর্কে : কোথায় তা কাজে লাগিয়েছে।'[16]

    ৩- গান বা বাজনা বাজানো :

    নিম্নোক্ত প্রমাণসমূহের ভিত্তিতে গান-বাজনা হারাম।

    ক. পবিত্র কুরআন থেকে :

    আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ (6) وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِ آَيَاتُنَا وَلَّى مُسْتَكْبِرًا كَأَنْ لَمْ يَسْمَعْهَا كَأَنَّ فِي أُذُنَيْهِ وَقْرًا فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ (7)

    'আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব। আর তার কাছে যখন আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে শুনতে পায়নি, তার দু'কানে যেন বধিরতা; সুতরাং তাকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।'[17]

    আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, 'আল্লাহর কসম, বেহুদা কথা দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য গান।' এ কথা তিনি তিনবার আওড়ান। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু জাবের রাদিআল্লাহু আনহু ও ইকরামা রাদিআল্লাহু আনহু থেকেও এমনটি বর্ণিত হয়েছে।

    খ. হাদীস থেকে :

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ وَلَيَنْزِلَنَّ أَقْوَامٌ إِلَى جَنْبِ عَلَمٍ يَرُوحُ عَلَيْهِمْ بِسَارِحَةٍ لَهُمْ يَأْتِيهِمْ ، يَعْنِي الْفَقِيرَ - لِحَاجَةٍ فَيَقُولُوا ارْجِعْ إِلَيْنَا غَدًا فَيُبَيِّتُهُمُ اللَّهُ وَيَضَعُ الْعَلَمَ وَيَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

    'আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে। আর কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের কাছে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের কাছে মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের কাছে কিছু চাইবে। তখন তারা বলবে, আগামীকাল ফেরত এসো। রাতেরবেলায় আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন এবং তাদের ওপর পর্বত ধ্বসিয়ে দেবেন। বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দেবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে।'[18]

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

    إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيَّ ، أَوْ حُرِّمَ الْخَمْرُ ، وَالْمَيْسِرُ ، وَالْكُوبَةُ قَالَ : وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ

    'আল্লাহ আমার ওপর হারাম করেছেন অথবা (তিনি বলেছেন) মদ, জুয়া ও তবলা হারাম করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আর প্রতিটি নেশাজাতীয় দ্রব্যই হারাম।'[19]

    গ. সাহাবীদের উক্তি থেকে :

    আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন,

    الدُّفُّ حَرَامٌ وَالْمَعَازِفُ حَرَامٌ وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ وَالْمِزْمَارُ حَرَامٌ.

    'দফ হারাম, বাদ্যযন্ত্র হারাম, তবলা হারাম এবং বাঁশি হারাম।'[20]

    ঘ. সালাফের উক্তি থেকে :

    প্রখ্যাত বুযুর্গ হাসান বসরী রহ. বলেন, মুসলিমের জন্য দফ বাজানো কিছুতেই শোভনীয় নয়, আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু -এর শিষ্যগণ দফ ভেঙ্গে ফেলতেন।'[21]

    উল্লেখ্য, গান ও বাদ্যযন্ত্র হারাম হওয়ার ব্যাপারে সকল ইমাম একমত।

    ৪- বিয়েতে হারাম কাজ হলেও তাতে অংশ নেয়া :

    বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি নিষিদ্ধ কিছুর আয়োজন থাকে তবে তাতে অংশ নেয়ার অনুমতি নেই। আলী রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    صَنَعْتُ طَعَامًا وَدَعَوْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ ، فَرَأَى فِي الْبَيْتِ تَصَاوِيرَ فَرَجَعَ ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ لِمَ رَجَعْتَ ؟ قَالَ : إِنَّ فِي الْبَيْتِ شَيْئًا فِيهِ تَصَاوِيرُ وَأَنَّ الْمَلاَئِكَةَ لاَ تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ تَصَاوِيرُ.

    'আমি একটি খাবার তৈরি করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত দিলাম। ফলে তিনি এলেন। তারপর ঘরে ছবি দেখতে পেয়ে ফেরত এলেন। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি ফিরে এলেন কেন? তিনি বললেন, 'ঘরে কিছু রয়েছে যাতে ছবি আঁকা। আর যে ঘরে ছবি থাকে তাতে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না।'[22]

    এ হাদীসের আলোকে আলিমগণ বলেন, যে দাওয়াতে নিষিদ্ধ বিষয় রয়েছে, তা বর্জন করা উচিত। ইমাম আওযায়ী রহ. বলেন, 'সে ঘরে বিয়ের দাওয়াতে যাওয়া যাবে না, যেখানে তবলা এবং বাদ্যযন্ত্র রয়েছে।'[23]

    ৫- দাড়ি মুণ্ডন করা :

    আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে বিয়ে উপলক্ষে দাড়ি মুণ্ডানো তো এখন অনেকের কাছেই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাড়ি না কামিয়ে বিয়েতে যাওয়াকে অনেকে দোষের মনে করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ

    'তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো : দাড়ি বড় করো এবং গোঁফ ছোট করো।'[24]

    হাদীসে দাড়ি রাখতে সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, যা থেকে প্রমাণিত হয় দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কোনো অজুহাত দাঁড় করিয়ে দাড়ি কাটার অবকাশ নেই। দাড়ি মুণ্ডানো হারাম। মুণ্ডনকারী গুনাহগার। কারণ, এতে কাফের ও নারীদের সঙ্গে সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। সরাসরি লঙ্ঘিত হয় আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ।

    ৬- বিয়েতে নারীদের বর্জনীয় কাজসমূহ :

    ক. ভ্রু উপড়ানো :

    ভ্রু উপড়ানো বা পাতলা করা এমন একটি কাজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন এবং এ কাজ করা ব্যক্তির ওপর অভিশাপ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

    لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ وَالنَّامِصَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ.

    'আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন সেসব মহিলার ওপর যারা সৌন্দর্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে ও করায়, ভ্রু উৎপাটন করে ও করায় এবং দাঁত ফাঁকা করে।’[25]

    খ. চুল কাটা : চুল কাটার তিনটি ধরন রয়েছে :

    এক. পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে চুল কাটা। এটি হারাম এবং কবীরা গুনাহ। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেন,

    ثَلاَثٌ لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : الْعَاقُّ بِوَالِدَيْهِ ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ - الْمُتَشَبِّهَةُ بِالرِّجَالِ – وَالدَّيُّوثُ

    'তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না : পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারী এবং কোটনা তথা ব্যভিচারের দূত।'[26]

    দুই. যদি চুল ছোট করা হয় এমনভাবে যে তাতে পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ হয় না তবে ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে তা মাকরূহ।

    তিন. যদি চুল ছোট করা হয় অমুসলিম রমণীদের অনুকরণে তবে তা হারাম। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

    'যে বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।'[27]

    গ. অশ্লীল কিংবা প্রসিদ্ধি ও অহংকারের পোশাক পরা :

    অতি টাইট, পাতলা ও গোপন সৌন্দর্যকে প্রস্ফূটিত করে এমন পোশাক পরা। বক্ষ, বাহু ও কটি দৃশ্যমান হয় এমন অপ্রচলিত ও দৃষ্টিকটু পোশাক পরে অহংকার দেখানো এবং পর পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا.

    'দুই শ্রেণীর জাহান্নামী লোক যাদের আমি এখনো দেখিনি। (তবে তারা অচিরেই সমাজে দেখা দেবে) এক. সন্ত্রাসী দল, তাদের সাথে গরুর লেজ সদৃশ চাবুক থাকবে। তারা এর দ্বারা লোকজনকে আঘাত করবে। দুই. এমন নারী যারা (পাতলা ফিনফিনে কাপড়) পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, অপরকে আকর্ষণকারিণী আবার নিজেরাও অপরের দিকে আকৃষ্ট। তাদের মস্তকগুলো হবে বুখতি উটের হেলানো কুজের মতো। এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ এমন এমন দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।'[28]

    অপর এক হাদীসে তিনি বলেন,

    مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ فِي الدُّنْيَا ، أَلْبَسَهُ اللَّهُ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ .

    'যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধির পোশাক পরিধান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন।'[29]

    ঘ. সুগন্ধি ব্যবহার করা :

    বিবাহ অনুষ্ঠানে ইদানীং মেয়েরা বিশেষত তরুণীরা মহা উৎসাহে সেন্ট ব্যবহার করে অংশগ্রহণ করে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ ، فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا رِيحَهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ

    'যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে অতপর মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তার সুগন্ধি পায়, সে ব্যভিচারিণী।'[30]

    ঙ. ছবি তোলা :

    আমাদের বিবাহ অনুষ্ঠানগুলোর আরেক গর্হিত কাজ ছবি তোলা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ

    'প্রত্যেক ছবি অঙ্কনকারীই জাহান্নামে যাবে।'[31]

    অতএব সেই ছবি সম্পর্কে আর কী বলার প্রয়োজন আছে যা পর পুরুষের হাতে প্রিন্ট হয়, পর পুরুষরা দেখে এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।

    পরিশেষে বলা যায় যারা নিজের জীবনের প্রতিটি পর্বকে কুরআন-সুন্নাহর আদলে গড়ে তোলেন এবং সর্ব প্রকার নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকেন, আশা করা যায় তারাই হবেন সফল ও কামিয়াব। তাদের মৃত্যু হবে পরম সৌভাগ্যকে সঙ্গে নিয়ে। আর তারাই হলেন সে দলের অন্তর্ভুক্ত আল্লাহ যাদের কথা বলেছেন এভাবে :

    وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا (74) أُولَئِكَ يُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوا وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَامًا (75) خَالِدِينَ فِيهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا (76)

    'আর যারা বলে, 'হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন'। তারাই, যাদেরকে [জান্নাতে] সুউচ্চ কক্ষ প্রতিদান হিসাবে দেয়া হবে যেহেতু তারা সবর করেছিল সেজন্য। আর তাদের সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম দ্বারা। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতইনা উৎকৃষ্ট!'[32]

    আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে তাঁর প্রতিটি নির্দেশ মেনে চলার তাওফীক দিন। আমাদের জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজে তাঁর প্রিয় হাবীবের সুন্নতের অনুবর্তী হবার তাওফীক দিন। আমীন।

    [1]. রূম : ২১।

    [2]. মুসনাদ আহমাদ : ১২৬৩৪।

    [3]. বাইহাকী, সুনান কুবরা : ১৪২১১; ইবন মাজা : ১৯১৮।

    [4]. তাবরানী, মু'জামুল কাবীর : ৮৯০০।

    [5]. বুখারী : ৭৩৯৬।

    [6]. মুসনাদ আহমদ : ১০১৭০; ইবন মাজা : ৬৩৯।

    [7]. সুনান আবূ দাউদ : ৪১৮২।

    [8]. মুসলিম : ৭২০।

    [9]. মুসলিম : ১৬৭৪; মুসনাদ আহমদ : ২১৫১১।

    [10]. মুসলিম : ৩৬১৫।

    [11]. বুখারী : ২০৪৯; মুসলিম : ৩৫৫৬।

    [12]. বুখারী : ৫১৭৩; মুসলিম : ৩৫৮২।

    [13]. মুসলিম : ৩৫৯৮।

    [14]. আবূ দাউদ, সুনান : ২১৩০।

    [15]. তিরমিযী : ১১১১; মুসনাদ আহমদ : ১৮৩০৫।

    [16]. তিরমিযী : ২৬০২।

    [17]. সূরা লুকমান : ৬-৭।

    [18]. বুখারী : ৫৫৯০।

    [19]. আবূ দাউদ : ৩৬৯৬।

    [20]. বাইহাকী : ২১৫২৯।

    [21]. আলবানী, তাহরীমু আলাতিত-তারব : ১/১০৪।

    [22]. প্রাগুক্ত।

    [23]. মুসনাদ বাযযার : ৫২৩; ইবন মাজা : ৩৩৫৯।

    [24]. বুখারী : ৫৮৯২; মুসলিম : ৬২৫।

    [25]. মুসলিম : ৫৬৯৫।

    [26]. মুসনাদ আহমদ : ৬১৮০।

    [27]. আবূ দাউদ : ৪০৩৩।

    [28]. মুসলিম : ৫৭০৪; বাইহাকী : ৩৩৮৬।

    [29]. আবূ দাউদ : ৪০২৩; ইবন মাজাহ : ৩৬০৩।

    [30]. নাসায়ী : ৯৩৬১; আহমদ : ১৯৭২৬।

    [31]. মুসলিম : ৫৬৬২।

    [32]. সূরা ফুরকান : ৭৪-৭৬।