×
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে নারীর অধিকার ও ইসলামের ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণকেই তুলে ধরা হয়েছে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে। ওয়ারিশের ক্ষেত্রে, পুরুষের বিপরীতে নারীকে ঠকানো হয়েছে বলে যে অপবাদ-অভিযোগ ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয় উক্ত প্রবন্ধে তার জবাব দেওয়া হয়েছে চমৎকার ভাষায়।

সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার: ইসলামই দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা

মুহাম্মাদ আফীফ ফুরকান

সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

حقوق المرأة في الميراث

(باللغة البنغالية)

محمد عفيف فرقان

مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

সূচিপত্র

ভূমিকা... 3

ইসলামি উত্তরাধিকার বিধানের বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি... 5

নারীর উত্তরাধিকার. 10

প্রাপ্তির ঘোষণা.. 12

নির্দিষ্ট অংশ পাওয়া নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি.. 13

প্রসঙ্গ: পুরুষ পাবে নারীর দ্বিগুণ, কখন এবং কেন?. 14

দ্বিগুণ পাওয়া সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়. 14

নারী পুরুষের অংশ প্রাপ্তির একটি তুলনামূলক চিত্র. 15

নারী কেবল চার অবস্থায় পুরুষের অর্ধেক পায়. 16

১০ অবস্থায় নারী পুরুষের সমান পায়. 16

অনেক অবস্থায় নারী পুরুষের চেয়ে বেশি পায়. 18

অনেক সময় নারী মিরাছ পায় কিন্তু তার সমমানের পুরুষ বঞ্চিত হয় 21

ছেলে কেন মেয়ের অর্ধেক পায়?. 23

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা.............

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদে নারীর অধিকার ও ইসলামের ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণকেই তুলে ধরা হয়েছে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে। ওয়ারিশের ক্ষেত্রে, পুরুষের বিপরীতে নারীকে ঠকানো হয়েছে বলে যে অপবাদ-অভিযোগ ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয় উক্ত প্রবন্ধে তার জবাব দেওয়া হয়েছে চমৎকার ভাষায়।

 ভূমিকা

মানব সমাজ যদি হয়ে থাকে নারী পুরুষের একটি সংমিশ্রিত রূপ, তবে সন্দেহ নেই নারী সে সমাজের ভারসাম্যের প্রতীক ও নিয়ন্ত্রণকারী সত্বা। নারী পরম শ্রদ্ধেয় মা, আদরের বোন, প্রেমময় স্ত্রী কিংবা স্নেহভাজন কন্যা হিসেবে পুরুষের অন্তর্জগতকে নিয়ন্ত্রণ করে অঘোষিতভাবে। মহান আল্লাহর সৃষ্টির সহজাত প্রক্রিয়ায় নারী ব্যতীত বা নারীর সক্রিয় উপস্থিতি ছাড়া একটি সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও সৃজনশীল সমাজ আশা করা যায় না। এ জন্যেই মানব জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান ইসলাম নারীকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে। তাকে বসিয়েছে মর্যাদার সুমহান আসনে এবং নিশ্চিত করেছে তার সামগ্রিক অধিকার। সন্তানকে মার সাথে সর্বোচ্চ সদাচরণ ও সেবার আদেশ দেওয়া হয়েছে। স্বামীকে দেওয়া হয়েছে স্ত্রীর ভরণ-পোষণসহ সার্বিক অধিকার আদায়ের আদেশ এবং কন্যা সন্তানের সঠিক লালন পালন ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রবলভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে তার পিতাকে। অথচ জাহেলি যুগে সেই মা-বোন-স্ত্রী-কন্যারাই চরম লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হতো। এ নির্জলা সত্যের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস।

কিন্তু যারা ইসলামকে সঠিকভাবে জানে না বা জেনেশুনেও বিবেক যাদের শিকলবন্দী এবং দৃষ্টি যাদের একচোখা, তারা প্রতিনিয়ত নারীকে ব্যবহার করে আসছে তাদের বিভিন্ন অসৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে। বিভিন্ন সময় তথাকথিত নারী আন্দোলনের নামে ইসলামকে সরাসরি নারীর মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি ৮৮% মুসলিম অধ্যুষিত প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদশেও একটি বিশেষ ইস্যুকে সামনে রেখে আমাদের রক্ষণশীল ইসলামপ্রিয় নারী সমাজকে ইসলামের বিপক্ষে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা শুরু হয়েছে বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠির মাধ্যমে। বিশ্ব নারী দিবসে পশ্চিমা বিশ্বের জন্য তারা উপহারস্বরূপ “নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণ” নামে একটি খসড়া প্রস্তাব সামনে নিয়ে আসে। যাতে অন্যান্য দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি সম্পদের উত্তরাধিকারে নারীকে পুরুষের সমান সম্পত্তি দান এবং আল-কুরআনের শাশ্বত বিধান “এক ছেলে পাবে দুই মেয়ের অংশ সমান” বিধানটি বিলুপ্ত করার দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এরপরের ঘটনা মোটামুটি সবার জানা। এ প্রস্তাবটি পাশ হতে পারে নি বটে; কিন্তু যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ নাটকের অবতারণা করা হয় তা অনেকাংশে সফল হয়েছে। সরলমনা ইসলামী জ্ঞানহীন ও ধর্মহীন শিক্ষায় শিক্ষিত সমাজ (বিশেষতঃ নারী সমাজ) ইসলামকে তাদের অধিকার হরণকারী একটি জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে এবং এর ঢেউ ধর্মপরায়ণ রক্ষণশীল মুসলিম সমাজেও এসে লেগেছে।

বক্ষ্যমান নিবন্ধে আমরা নারীর উত্তরাধিকারে ইসলামী বিধানের যৌক্তিকতা এবং কথিত নারীবাদীদের দাবির অসারতা তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ইসলামি উত্তরাধিকার বিধানের বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি:

ইসলামী উত্তরাধিকার বিধানে নারীর অধিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে ইসলামী উত্তরাধিকারের কিছু বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। যেহেতু আলোচ্য বিষয়ের সাথে এর যোগসূত্র রয়েছে তাই আলোচানা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। এতে অনেক সংশয়েরও অবসান ঘটবে।

প্রথমত:

ইসলাম সুষম বন্টনে বিশ্বাসী, সমবন্টনে নয়। অবস্থা ও অবস্থান ভেদে মানুষের প্রকৃতিগত প্রয়োজন ও চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, ধরা যাক সরকারি তহবিল থেকে বন্টনের জন্য কিছু জিনিস আসলো। বন্টনের ক্ষেত্রে দেখা গেলো এক পরিবারে দশজন সদস্য অন্য পরিবারে মাত্র দুইজন। বিবেকবান মাত্রই এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবে, সমান অধিকারের নামে উভয়জনকে সমপরিমাণ দেওয়া কোনো মতেই ন্যায় বিচার হবে না। বরং এক্ষেত্রে ন্যায় বিচার হবে প্রয়োজনানুসারে বন্টন করা। যাকে বলা হয় সুষম বন্টন। তেমনিভাবে ইসলাম সমবন্টনকে ইনসাফের মূলভিত্তি মনে করে না; বরং ইসলাম মনে করে সুষম বন্টনই ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের মূল ভিত্তি। এর আলোকে বন্টনের ক্ষেত্রে কখনো সমান হবে আবার কখনো অবস্থা ভেদে বিশাল পার্থক্য হতে পারে। উত্তরাধিকার বিধানেও ইসলাম এ নীতিকেই অবলম্বন করেছে।

দ্বিতীয়ত:

ইসলামের উত্তরাধিকার আইন পুরুষ বা নারী কেন্দ্রিক নয়, তেমনিভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদের অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের ব্যবধানও মূখ্য বিষয় নয়। সুতরাং একথা বলার সুযোগ নেই যে, ইসলামী উত্তরাধিকার আইন পুরুষকেন্দ্রিক বা নারী কেন্দ্রিক।

তৃতীয়ত:

অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি দিককে সামনে রাখা হয়:

১. মৃত ব্যক্তির সাথে ওয়ারিসের নিকটাত্মীয়তা: যে ওয়ারিস মৃত ব্যক্তির যত কাছের আত্মীয় হবে তার অংশ তত বেশি হবে। যেমন, ভাই বোনের তুলনায় ঔরসজাত সন্তানেরা বেশি পাবে এবং এটিই ইনসাফের দাবী।

২. নতুন প্রজন্ম বা বংশধর প্রবীণদের তুলনায় বেশি পাবে: যেমন, সন্তান-সন্ততি পিতা মাতার তুলনায় বেশি পাবে এবং এটিই যুক্তির দাবী। যেহেতু নতুনদের সামনে রয়েছে ভবিষ্যতের এক বিশাল জীবন।
৩. আর্থিক প্রয়োজনীয়তা ও সামাজিক দায়ভার: অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি লক্ষণীয় দিক হলো অংশীদার ওয়ারিসের সামাজিক দায়ভার ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তা। যেমন, একটি পরিবারের সার্বিক খরচ নির্বাহ করার দায়িত্ব পুরুষের। স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তান-সন্ততিদের খরচ যোগান দান এবং পিতা-মাতার সার্বিক সেবা-শুশ্রূষা এসব তো পুরুষেরই দায়িত্ব। সামাজিক ও নৈতিক কর্তব্য। এসবদিক লক্ষ্য রেখে ইসলাম অংশ নির্ধারণে তারতম্য করেছে। যেমন, মেয়ের তুলনায় ছেলের আর্থিক বাধ্য-বাধকতা ও সামাজিক কর্তব্য বেশি। তাই ইসলাম ছেলের জন্য মেয়ের দ্বিগুণ অংশ নির্ধারণ করেছে।

চতুর্থত:

দুর্বলদেরকেও অবহেলা করা হয় নি। জাহেলি সমাজে নারী ও শিশুকে ওয়ারিস গণ্য করা হতো না, তারা যুদ্ধে যেতে পারে না শুধুমাত্র এই অজুহাতে। এককথায় দুর্বলের ওপর সবলের খবরদারি। কিন্তু ইসলাম সে অমানবিক বৈষম্য দূর করে তাদেরকেও তাদের প্রাপ্য যথাযথভাবে দান করেছে।

পঞ্চমত:

আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করাও উত্তরাধিকার বিধানের অন্যতম লক্ষ্য। মিরাছের সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে ইসলাম রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَأُوْلُواْ ٱلۡأَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلَىٰ بِبَعۡضٖ فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِۚ﴾ [الانفال: ٧٥]

“আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়রা একে অপরের কাছে আল্লাহর কিতাবের ঘোষণা মতে অধিক হকদার।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৭৫]

নারীর উত্তরাধিকার:

পূর্বেই আলোচিত হয়েছে, ইসলামী উত্তরাধিকার আইন ন্যায়বিচার ও সুষম বন্টনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশেষত: নারীর উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম যুগান্তকারী ও ন্যায়সঙ্গত বিধান দিয়েছে। যেখানে প্রাচীন রোমান সমাজে নারী একজন স্ত্রী হিসেবে কোনো অংশ পেত না। ইয়াহূদী বিধানে ছেলে থাকা অবস্থায় নারীর কোনো ধরনের অংশ নেই। আর ইসলামের আবির্ভাব পূর্ব জাহেলি সমাজের দিকে একটু দৃষ্টি দিলে ভেসে উঠে মায়ের জাতি-নারীর করুণ চিত্র। সম্পদে তার উত্তরাধিকার তো দূরের কথা; বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ নারীকেই মিরাছের সম্পদ হিসেবে পরিগণিত করা হতো। কুরআনুল কারীমে নারীর নামে নামকরণকৃত সূরা আন-নিসার ১৯নং আয়াত,

﴿يا أَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ﴾ [النساء: ١٩]

“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারি হবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]

এ করুণ বাস্তবতা ইঙ্গিত বহন করে, অন্যান্য সাধারণ অবস্থায় নারীকে সমাজের বোঝা মনে করা হতো। যুদ্ধে যেতে পারে না, জাতীয় অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারে না, এ জাতীয় অজুহাত দেখিয়ে নারীকে সম্পূর্ণভাবে মিরাসের সম্পদ হতে বঞ্চিত করা হতো। এমন অবস্থায় ইসলাম সার্বজনীন ও কালজয়ী মানবিক বিধান দিয়ে নারীকে অবহেলা ও লাঞ্ছনার এই অতল গহ্বর থেকে উদ্ধার করে সম্মানের আসনে বসিয়েছে। দেখিয়েছে নতুন করে জীবন চলার আলোকিত পথ। কুরআনের শাশ্বত বাণীতে ঘোষিত হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর প্রাপ্তির ঘোষণা।

প্রাপ্তির ঘোষণা:

বিশিষ্ট মুফাসসির সা‘ঈদ ইবন জুবাইর ও ক্বাতাদাহ রহ. বলেন, ইসলাম পূর্ব যুগে মুশরিকরা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মাঝেই বন্টন করে দিত। নারী ও শিশুদেরকে কিছুই দিতো না। এরই প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় সূরা আন-নিসার ৭নং আয়াত:

﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [النساء: ٧]

“পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পদে পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে এবং নারীদেরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট অংশ। তা কম হোক কিংবা বেশি।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]

পবিত্র কুরআনের এ ঘোষণার মাধ্যমে নারী উত্তরাধিকার সূত্রে সুনির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকারই লাভ করলো। এ বিধান কোনো কথিত নারীবাদী আন্দোলনে বাধ্য হয়ে প্রণীত হয় নি; বরং মহান প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক অবগত হয়েই তাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য এ বিধান দান করেছেন। এভাবেই নারী তার ব্যক্তি মালিকানার অধিকার পেলো। মা, মেয়ে, স্ত্রী, বোন, দাদী, নাতনী হিসেবে নারীর সুনির্দিষ্ট অংশ ঘোষিত হলো। এর বাইরেও বন্টনের পর অবশিষ্টাংশেও বিভিন্ন অবস্থায় রয়েছে নারীর প্রাপ্যাংশ।

নির্দিষ্ট অংশ পাওয়া নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি:

ইসলামী উত্তরাধিকার বিধানে নির্দিষ্ট অংশ পাওনাদার ১২ জন। ওয়ারিসের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮ জন (মা, মেয়ে, স্ত্রী, ছেলের মেয়ে, সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় বোন, দাদী, নানী)। আর পুরুষ হলো ৪ জন, (বাবা, স্বামী, দাদা, মা সম্পর্কীয় ভাই)। যেখানে ঔরসজাত মেয়ে ও বোনের জন্য নির্দিষ্ট অংশ বন্টন করা করা হয়েছে। এর বিপরীতে ঔরসজাত ছেলে ও ভাইদের জন্য নির্দিষ্ট কোন অংশ নেই; বরং নির্দিষ্ট অংশধারী ওয়ারিসদের হিসসা বন্টনের পর আসবে তাদের প্রাপ্তির হিসাব।

 প্রসঙ্গ: পুরুষ পাবে নারীর দ্বিগুণ, কখন এবং কেন?

পবিত্র কুরআনের সূরা আন-নিসার ১১নং আয়াত لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ“ছেলে পাবে মেয়ের দ্বিগুণ” এ আয়াত নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষতঃ যারা প্রতিনিয়ত ইসলামের দুর্বলতা খুঁজে বের করার নোংরা ব্রতে লিপ্ত। তারা এ আয়াতের মাধ্যমে এ কথা সাব্যস্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকে যে, ইসলাম নারীকে পুরুষের অর্ধেক মনে করে। একটি পূর্ণাঙ্গ সত্তা হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই মিরাসের অংশও তাদেরকে পুরুষের অর্ধেক দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ আয়াত যে ইনসাফ ও সুষম বন্টনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারে না।

দ্বিগুণ পাওয়া সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়:

কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী বিধানটি শুধুমাত্র ছেলে-মেয়ে এবং ভাই-বোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ নারী বলতে শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান বা বোনদেরকে বুঝায় না। এরা ছাড়াও অনেক নারী ওয়ারিস রয়েছে যাদের বিপরীতে পুরুষের দ্বিগুণ পাওয়ার বিধান নেই। এজন্যই এ আয়াতের পরবর্তী আয়াতগুলোতে মা-স্ত্রীসহ অন্যান্য নারী ওয়ারিসদের নির্দিষ্ট অংশের বর্ণনা এসেছে। সেখানে তো পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পায় নি। তাছাড়া পুরুষদের পরস্পরের মধ্যেও বিভিন্ন অবস্থায় বিশাল ব্যবধান হয়ে থাকে। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নারী পুরুষের সমান পাচ্ছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি পাচ্ছে। একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরলে ব্যাপারটি আরো পরিস্কার হয়ে যাবে আশা করি।

নারী পুরুষের অংশ প্রাপ্তির একটি তুলনামূলক চিত্র:

মিসরের জাতীয় ফাতওয়া বোর্ড কর্তৃক প্রচারিত এক ফাতওয়ায় মিরাসের সম্পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে যে বিস্ময়কর তথ্য এসেছে তার মাধ্যমে অনেকের চোখ খুলে যেতে পারে, বিবেক পেতে পারে নতুন খোরাক। ঐ পরিসংখ্যানে নারী কখন পুরুষের অর্ধেক পায়, আর কখন সমান পায়, আর কখন বেশি পায় তার বর্ণনা এসেছে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে। লক্ষ্য করুন:

নারী কেবল চার অবস্থায় পুরুষের অর্ধেক পায়:

১. মেয়ে ও নাতনী (ছেলের মেয়ে) ছেলে ও নাতী (ছেলের ছেলে) থাকা অবস্থায়।

২. ছেলে সন্তান ও স্বামী বা স্ত্রী না থাকলে “মা” পিতার অর্ধেক পায় ।

৩. “সহোদরা বোন” সহোদর ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে।

৪. “বৈমাত্রেয় বোন” বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে।

১০ অবস্থায় নারী পুরুষের সমান পায়:

১. পিতা-মাতা সমান অংশ পাবে ছেলের ছেলে থাকলে।

২. বৈপিত্রেয় ভাই-বোন সব সময় সমান অংশ পায়।

৩. বৈমাত্রেয় ভাই-বোন থাকলে সব ধরণের বোনেরা (সহোদরা, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়) বৈপিত্রেয় ভাইয়ের সমান পাবে।

৪. শুধুমাত্র ঔরসজাত মেয়ে ও মৃতের ভাই একসাথে থাকলে উভয়ে সমান অংশ পাবে। (মেয়ে পাবে অর্ধেক আর বাকী অংশ পাবে চাচা)

৫. “নানী” বাবা ও ছেলের ছেলের সাথে সমান অংশ পায়।

৬. মা ও বৈপিত্রেয় দুই বোন স্বামী ও সহোদর ভাই এর সাথে সমান অংশ পায়।

৭. “সহোদর বোন” স্বামীর সাথে ওয়ারিস হলে সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পাবে। অর্থাৎ সহোদর বোনের পরিবর্তে সহোদর ভাই হলে যে অংশ পেত ঠিক সহোদরাও একই অংশ পাবে। অর্থাৎ মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে।

৮. বৈমাত্রেয় বোন সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পায় যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী, মা, বৈপিত্রেয় এক বোন এবং একজন সহোদর ভাই থাকে। এ অবস্থায় স্বামী মূল সম্পদের অর্ধেক, মা এক ষষ্ঠাংশ, বৈপিত্রেয় ভাই এক ষষ্ঠাংশ এবং বাকী এক ষষ্ঠাংশ পাবে সহোদর ভাই।

৯. নির্দিষ্ট অংশধারী ওয়ারিস এবং আসাবা সূত্রে পাওয়ার মত কেউ না থাকলে নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়রা সমান অংশ পাবে। যেমন, মেয়ের ছেলে, মেয়ের মেয়ে, মামা ও খালা ছাড়া অন্য কোন ওয়ারিস না থাকলে এদের সবাই সমান অংশ পাবে।

১০. তিন প্রকারের মহিলা এবং তিন প্রকারের পুরুষ কখনো সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয় না। এক্ষেত্রেও নারী পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করছে।

অনেক অবস্থায় নারী পুরুষের চেয়ে বেশি পায়। যেমন,

১. স্বামী থাকা অবস্থায় একমাত্র কন্যা পাবে অর্ধেক আর স্বামী পাবে এক-চতুর্থাংশ।

২. দুই কন্যা স্বামীর সাথে হলে। দুই মেয়ে পাবে দুই-তৃতীয়াংশ আর স্বামী এক-চতুর্থাংশ।

৩. কন্যা মৃতের একাধিক ভাইয়ের সাথে হলে বেশি পাবে।

৪. যদি মৃত ব্যক্তি স্বামী, বাবা, মা ও দুই কন্যা রেখে যায় তবে দুই মেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ পাবে। কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় যদি মেয়ের পরিবর্তে দুই ছেলে থাকত তবে তারা নিশ্চিতভাবে দুই মেয়ের তুলনায় কম পেত। কেননা ছেলের অংশ হলো এখানে অন্যান্য ওয়ারিসদেরকে তাদের নির্ধারিত অংশ দেওয়ার পর যা বাকী থাকে। সুতরাং স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ, বাবা ও মা উভয়ে পাবে এক-ষষ্ঠাংশ করে এবং বাকী অংশ পাবে দুই ছেলে যা দুই-তৃতীয়াংশ তো নয়ই বরং অর্ধেকের চেয়েও কম।

৫. ঠিক একই ধরনের আরেকটি অবস্থা দুই সহোদর বোনের ক্ষেত্রে। যদি ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী, দুই সহোদর বোন এবং মা থাকে তখন দুই বোন দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ পায়। কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় যদি দুই বোনের জায়গায় দুই ভাই থাকত তখন ঐ দুই ভাই মিলে এক-তৃতীয়াংশের বেশি পেত না।

৬. তেমনিভাবে একই অবস্থায় বৈমাত্রেয় দুই বোন বৈমাত্রেয় দুই ভাইয়ের চেয়ে বেশি পায়।

৭. অনুরূপভাবে যদি ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী, বাবা, মা ও মেয়ে থাকে তবে মেয়ে মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে। কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় ছেলে থাকলে পেত তার চেয়ে কম। যেহেতু তার প্রাপ্যাংশ হলো অংশীদারদেরকে দেওয়ার পর অবশিষ্টাংশ।

৮. ওয়ারিস যদি হয় স্বামী, মা ও এক সহোদর বোন তখন ঐ সহোদর বোন অর্ধেক সম্পদ পাবে যা তার স্থানে সহোদর ভাই হলে পেত না।

৯. ওয়ারিস যদি হয় স্ত্রী, মা, বৈপিত্রেয় দুই বোন এবং দুই সহোদর ভাই তখন দূরের আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও বৈপিত্রেয় দুই বোন দুই সহোদরের চেয়ে বেশি পাবে। যেহেতু বৈপিত্রেয় বোনদ্বয় পাবে এক-তৃতীয়াংশ, আর দুই সহোদর পাবে অবশিষ্টাংশ যা এক-তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।

১০. যদি স্বামী, বৈপিত্রেয় বোন ও দুই সহোদর ভাই থাকে সে ক্ষেত্রে বৈপিত্রেয় বোন এক-তৃতীয়াংশ পাবে। অথচ এই দুই সহোদর অবশিষ্টাংশ থেকে যা পাবে তা ঐ বোনের এক-চতুর্থাংশেরও কম।

১১. ওয়ারিস যদি হয় বাবা, মা ও স্বামী এ ক্ষেত্রে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মত অনুসারে মা পাবে এক-তৃতীয়াংশ, আর বাবা পাবে এক-ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ মায়ের অর্ধেক।

১২. স্বামী, মা, বৈপিত্রেয় বোন ও দুই সহোদর ভাই ওয়ারিস হলে এক্ষেত্রে ঐ বোন দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও সহোদর ভাইদ্বয়ের দ্বিগুণ পাবে।

অনেক সময় নারী মিরাছ পায় কিন্তু তার সমমানের পুরুষ বঞ্চিত হয়:

১. ওয়ারিস যদি হয় স্বামী, বাবা, মা, মেয়ে ও নাতনী (ছেলের মেয়ে) এক্ষেত্রে নাতনী এক-ষষ্ঠাংশ পাবে। অথচ একই অবস্থায় যদি নাতনীর পরিবর্তে নাতী (ছেলের ছেলে) থাকত তখন এই নাতী কিছুই পেত না। যেহেতু নির্ধারিত অংশীদারদেরকে দিয়ে অবশিষ্টাংশই তার প্রাপ্য ছিলো। অথচ এ অবস্থায় কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাই তার প্রাপ্তির খাতাও থাকে শূন্য।

২. স্বামী, সহোদর বোন ও বৈমাত্রেয় বোন থাকা অবস্থায় বৈমাত্রেয় বোন এক-ষষ্ঠাংশ পাবে। অথচ তার স্থানে যদি বৈমাত্রেয় ভাই থাকতো তবে সে কিছুই পেত না, যেহেতু তার জন্য নির্ধারিত অংশ নেই।

৩. অনেক সময় দাদী মিরাছ পায়; কিন্তু দাদা বঞ্চিত হয়।

৪. মৃত ব্যক্তির যদি শুধুমাত্র নানা ও নানীই ওয়ারিস হিসেবে থাকে তখন সব সম্পত্তি পাবে নানী। নানা কোনো কিছুই পাবে না।

এরপরও কি বলা হবে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে ঠকিয়েছে? এ তুলনামূলক আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো এ বাস্তবতাকে সাব্যস্ত করা যে,

এক. নারী পুরুষের অর্ধেক পায় এই বিধান সব সময়ের জন্য নয়।

দুই. অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী কোনো অংশেই পুরুষের চেয়ে কম নয়।

সুতরাং অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বিভাজন টানা নিতান্তই অজ্ঞতার পরিচায়ক।

সম্ভবত এসব তথ্য জেনেই জনৈক মনীষী বলেছিলেন: “ইসলাম যদি ইনসাফের ধর্ম না হতো তাহলে আমি বলতাম উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীর বিপরীতে পুরুষকে ঠকানো হয়েছে।”

 ছেলে কেন মেয়ের অর্ধেক পায়?

এখানে জোরালো একটি প্রশ্ন থেকে যায় আর তা হচ্ছে ছেলে থাকা অবস্থায় ‘মেয়ে’, ভাই থাকলে ‘বোন’ কেন তার অর্ধেক পাবে? তার মানে কি মেয়ে-সন্তান ছেলে-সন্তানের অর্ধেক মর্যাদা রাখে? এ সংশয় নিরসনের পূর্বে স্মরণ করা প্রয়োজন যে, ইসলামী উত্তরাধিকার বিধানে নারী-পুরুষের বিভাজনটি মৌলিক কোনো লক্ষণীয় বিষয় নয়; বরং সামাজিক দায়ভার ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তার কারণেই সাধারণত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তফাৎ হয়ে থাকে। ছেলে সন্তান মেয়ের দ্বিগুণ পাওয়ার অনেক গুলো যৌক্তিক কারণের মধ্যে কয়েকটি হলো:

১. পারিবারিক দায়িত্ব: পরিবারের কর্তা হিসেবে সব খরচপাতি বহন করতে হয় ছেলেকে। পিতা-মাতার খেদমত, সন্তান-সন্ততির লালনপালন এবং আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ খবর নেওয়ার দায়িত্বও মূলত পুরুষের ওপরই অর্পন করেছে ইসলাম। বিপরীতে মেয়ে এসব দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তারপরও ইসলাম তাকে বঞ্চিত করে নি।

২. স্ত্রীর যাবতীয় অধিকার: দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের পথে পুরুষকে গুণতে হয় স্ত্রীর দেনমোহর বাবদ একটি মোটা অংকের কড়ি। আর বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণ ও যাবতীয় খরচপাতিও এই পুরুষকেই বহন করতে হয়। পক্ষান্তরে মেয়ে বিয়ের আগে থাকে পিতার তত্বাবধানে। তার আদর সোহাগে বড় হয়। বিয়ের সময় স্বামীর কাছ থেকে দেনমাহর পায়। তারপর তার ভরণপোষণের যাবতীয় দায়িত্ব স্বামীর। সাংসারিক খরচ বাবদ একটি পয়সাও তাকে ব্যয় করতে হয় না। সবই স্বামীর দায়িত্ব। তাই তার প্রাপ্ত সম্পদের মূলধন কখনো হ্রাস পায় না। এরপরও তো ইসলাম তাকে বঞ্চিত করে নি; বরং ইসলাম তার সম্পদকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে।

এসব যৌক্তিক কারণে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের দাবী হলো ছেলেকে মেয়ের চেয়ে বেশি দেওয়া। যেহেতু ইনসাফ হলো সুষম বন্টন, সমান বন্টন নয়।

পরিশেষে সত্য উচ্চারণ করে বলতে হয়, ইসলামের উত্তরাধিকার বিধান একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত বিধান। যেখানে প্রত্যেক শ্রেণির ওয়ারিসের তার উচিত প্রাপ্যাংশ লাভের নিশ্চয়তা রয়েছে। সত্য উপলব্ধিকারী অমুসলিম চিন্তাবিদ Gostaf lobon ইসলামী উত্তরাধিকার বিধানকে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে:

কুরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার বিধান বড়ই ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক। এ বিধানকে ফরাসি ও ব্রিটিশ আইনের সাথে তুলনা করে আমার কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, ইসলামী শরী‘আহ বা বিধান স্ত্রীদেরকে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে এমন সব অধিকার দিয়েছে যার কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না আমাদের আইনসমূহে।

হ্যাঁ, আল্লাহর দেওয়া বিধানের তুলনা কোনো মানব রচিত বিধানের সাথে চলে না। আল্লাহর আইন সর্বকালের, সর্বস্থানের এবং সকলের জন্য। আর আল্লাহর আইন অনুসরণেই রয়েছে মানবতার মুক্তি, শান্তি ও সাফল্যের নিশ্চয়তা।

সমাপ্ত