আহলে বাইতের ফযীলত, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
- আহলে বাইতের ফযীলত, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
- আহলে বাইত বলতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই পরিবার-পরিজন বুঝানো উদ্দেশ্য, যাদের ওপর সদকা হারাম। তারা হলেন আলী, জাফর এবং আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুম-এর পরিবার ও সন্তান-সন্ততি এবং বনু হারেস ইবন আব্দুল মুত্তালিব এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল পবিত্রা স্ত্রীগণ ও কন্যাবর্গ। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
- অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদের গৃহে কিতাব ও সুন্নাহের যা কিছু নাযিল করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, সে অনুযায়ী তোমরা আমল কর।
- কোনো কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহার এ বিশেষ মর্যাদার কারণ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছাড়া আর কোনো কুমারী নারী বিবাহ করেন নি এবং তার বিছানায় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কোনো পুরুষ শয়ন করেন নি। অতএব, তার এ বিশেষ গুণে অভিষিক্তা হওয়া এবং সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারিণী হওয়া যথোচিত হয়েছে। আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, তাই তাঁর আত্মীয়-স্বজনও আহলে বাইত নামে অভিহিত হওয়ার অধিক হকদার ও উপযুক্ত।
- তাই আহলে সুন্নাত তাদেরকে ভালোবাসে ও সম্মান করে। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ও সম্মান করারই অন্তর্ভুক্ত। এ শর্তসাপেক্ষে যে, তারা সুন্নাতের অনুসারী হবে এবং মিল্লাতের আদর্শের ওপর স্থিতিশীল থাকবে, যেমনি ভাবে তাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু ও তার সন্তানগণ এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার সন্তানগণ প্রমুখ সে আদর্শের ওপর ছিলেন। পক্ষান্তরে যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করবে এবং দীনের ওপর স্থিতিশীল থাকবে না, তাদের সাথে বন্ধুত্ব- যদি তারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও থাকে -জায়েয হবে না।
আহলে বাইতের ফযীলত, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
فضل أهل البيت وما يجب لهم من غير جفاء ولا غلو
আহলে বাইত বলতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই পরিবার-পরিজন বুঝানো উদ্দেশ্য, যাদের ওপর সদকা হারাম। তারা হলেন আলী, জাফর এবং আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহুম-এর পরিবার ও সন্তান-সন্ততি এবং বনু হারেস ইবন আব্দুল মুত্তালিব এবং নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল পবিত্রা স্ত্রীগণ ও কন্যাবর্গ। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং চান তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।" [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
ইমাম ইবন কাসীর রহ. বলেন, কুরআন মাজীদ নিয়ে যে চিন্তা-গবেষণা করে, সে কখনোই এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে না যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ উপরোক্ত আয়াতে শামিল রয়েছেন। কেননা বাক্যের পূর্বাপর ধারা নবীর স্ত্রীদের সাথে সম্পৃক্ত। এজন্যই উপরোক্ত আয়াতের পরই আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ﴾ [الاحزاب: ٣٤]
“আর আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে।" [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৪]
অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদের গৃহে কিতাব ও সুন্নাহের যা কিছু নাযিল করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, সে অনুযায়ী তোমরা আমল কর।
কাতাদাহ ও আরো অনেকে বলেন, আয়াতের অর্থ হল তোমরা সে নি'আমতের কথা স্মরণ কর, যা সকল মানুষের মধ্য থেকে শুধু তোমাদের জন্যই নির্ধারিত করা হয়েছে। তা হলো তোমাদের ঘরেই অহী নাযিল হয়ে থাকে। আয়েশা বিনতে সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু 'আনহা তাদের মধ্যে প্রথম, যিনি এ নি'আমত লাভ করেছেন এবং এ ব্যাপক রহমত লাভে তিনি তাদের মধ্যে এক বিশেষ মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন। কেননা তিনি ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের আর কোনো স্ত্রীর বিছানায় অহী নাযিল হয় নি, যেমন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
কোনো কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহার এ বিশেষ মর্যাদার কারণ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছাড়া আর কোনো কুমারী নারী বিবাহ করেন নি এবং তার বিছানায় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কোনো পুরুষ শয়ন করেন নি। অতএব, তার এ বিশেষ গুণে অভিষিক্তা হওয়া এবং সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারিণী হওয়া যথোচিত হয়েছে। আর যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, তাই তাঁর আত্মীয়-স্বজনও আহলে বাইত নামে অভিহিত হওয়ার অধিক হকদার ও উপযুক্ত।
এজন্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইতকে মহব্বত করে ও ভালোবেসে থাকে। আর তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসীয়তকে স্মরণ রাখে, যা তিনি 'গাদীরে খোম' নামক স্থানে ব্যক্ত করেছিলেন:
«وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي»
“আমার আহল, আমার আহলের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমার আহলের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।" (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮)
তাই আহলে সুন্নাত তাদেরকে ভালোবাসে ও সম্মান করে। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ও সম্মান করারই অন্তর্ভুক্ত। এ শর্তসাপেক্ষে যে, তারা সুন্নাতের অনুসারী হবে এবং মিল্লাতের আদর্শের ওপর স্থিতিশীল থাকবে, যেমনি ভাবে তাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু ও তার সন্তানগণ এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার সন্তানগণ প্রমুখ সে আদর্শের ওপর ছিলেন। পক্ষান্তরে যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করবে এবং দীনের ওপর স্থিতিশীল থাকবে না, তাদের সাথে বন্ধুত্ব- যদি তারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও থাকে -জায়েয হবে না।
অতএব, আহলে বাইত সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের ভূমিকা ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা আহলে বাইতের দীনদার ও সঠিক পথের উপর অবিচল ব্যক্তিদেরকে খুবই মহব্বত করে থাকে এবং আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করে এবং দ্বীনের আদর্শ হতে চ্যুত হয়ে যায়, তাদের থেকে দূরে সরে যায়। কেননা অবিচলভাবে আল্লাহর দীনের পূর্ণ অনুসারী না হওয়া পর্যন্ত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা তার কোনো কাজেই আসবে না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন এ আয়াত নাযিল হয়:
﴿وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤﴾ [الشعراء: ٢١٤]
“আর তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন কর।" [সূরা আশ-শু'আরা, আয়াত: ২১৪]
তখন তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন:
« يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا اشْتَرُوا أَنْفُسَكُمْ، لاَ أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا، يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ لاَ أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا، يَا عَبَّاسُ بْنَ عَبْدِ المُطَّلِبِ لاَ أُغْنِي عَنْكَ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا، وَيَا صَفِيَّةُ عَمَّةَ رَسُولِ اللَّهِ لاَ أُغْنِي عَنْكِ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا، وَيَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَلِينِي مَا شِئْتِ مِنْ مَالِي لاَ أُغْنِي عَنْكِ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا ».
“হে কুরাইশগণ! (অথবা অনুরূপ কোনো শব্দে তিনি সম্বোধন করেছিলেন) নিজেদেরকে ক্রয় করে নাও। আল্লাহ তা'আলার সামনে আমি তোমাদের কোনো কাজেই আসব না। হে আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকারে আসব না। হে রাসূলুল্লাহর ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর সামনে আপনার জন্য কিছুই করতে পারব না। হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! আমার সম্পত্তি হতে যা চাও চেয়ে নাও। তবে আল্লাহর কাছে আমি তোমার কোনো কাজেই আসব না।" (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৫৩, ৪৭৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ননং ২০৩)
অন্য এক হাদীসে এসেছে:
«وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ، لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ».
“আমল যাকে পেছনে ফেলে দেয়, বংশ তাকে এগিয়ে নিতে পারে না।" (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৯)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত সেই সব রাফেযী -শিয়াদের পথ ও মত থেকে পাক-পবিত্র, যারা কোনো কোনো আহলে বাইতের ব্যাপারে খুব বাড়াবাড়ি করে থাকে এবং তারা মাসূম (তথা সকল প্রকার গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত) বলে দাবি করে থাকে।
অনুরূপভাবে আহলে সুন্নাত সে সব নাসেবী লোকদের ভ্রান্ত পথ থেকেও মুক্ত, যারা দীনের প্রকৃত অনুসারী আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে থাকে এবং তাদের প্রতি কটূক্তি আরোপ করে থাকে।
একই ভাবে তারা সে সব বেদআতী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের ভ্রষ্টতা থেকেও পবিত্র, যারা আহলে বাইতকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাদেরকে রব হিসেবে স্থির করে।
এ ক্ষেত্রে এবং এ ছাড়া আর সব ব্যাপারেও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত ন্যায় সংগত নীতি ও সরল পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, যাতে কোনো বাড়াবাড়ি ও ত্রুটি কোনোটাই নেই এবং আহলে বাইতও ব্যাপারেও অধিকার ক্ষুন্ন ও অতিরঞ্জন কোনোটাই করা হয় নি। দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আহলে বাইতের লোকজন তাদের নিজেদের সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করার প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন এবং বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনকারীদের থেকে নিজেরা মুক্ত থেকেছেন। আমিরুল মুমিনীন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিজের ব্যাপারে বাড়াবাড়িকারীদেরকে অগ্নিদগ্ধ করেছেন এবং ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে হত্যা করা সমর্থন করেছেন। অবশ্য অগ্নিদগ্ধ করার বদলে তরবারী দ্বারা হত্যা করার প্রবক্তা ছিলেন তিনি। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু অতিরঞ্জনকারীদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবন সাবাকে হত্যা করার জন্য খুঁজে ছিলেন; কিন্তু সে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে লুক্কায়িত রাখে।
সমাপ্ত