محبة النبي صلى الله عليه وسلم للأطفال

أعرض المحتوى باللغة الأصلية anchor

translation লেখক : মনির হোসেন হেলালী
1

শিশুদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা

2.9 MB DOC
2

শিশুদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা

614.7 KB PDF

مقالة باللغة البنغالية، تناولت نماذج واقعية من حياة النبي - صلى الله عليه وسلم -، في تعامله مع الأطفال والناشئين.

    শিশুদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা

    মনির হোসেন হেলালী

    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    محبة النبي صلى الله عليه وسلم للأطفال

    (باللغة البنغالية)

    منير حسين هلالي

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সংক্ষিপ্ত বর্ণনা............

    আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।' আর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট শিশুদের সাথে ভালোবাসা ও স্নেহপূর্ণ আচরণত করতেন, তাদের সাথে সহানুভুতিশীল হতেন, তাদের অনুভূতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। এ প্রবন্ধে নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে শিশু-কিশোরদের সাথে তাঁর আচরণের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে।

    শিশুদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা

    ছোট-বড় সবার জন্যেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সর্বোত্তম আদর্শ। মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সকল স্থানেই রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম আদর্শের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি জগৎবাসীর জন্যে এসেছেন শিক্ষক হিসেবে। তাঁর ভালোবাসা আর সুন্দর আচরণ দিয়ে যুবক, বৃদ্ধ সবাইকে তিনি দিয়েছেন দীনের দাওয়াত, শিখিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সব বিষয়। উপনীত হয়েছেন তিনি সকল ক্ষেত্রে মানবতার পূর্ণ শিখরে; এই মহৎগুণের মধ্যে রয়েছে শিশুদের প্রতি তার সুন্দর আচার-ব্যবহার, যাতে রয়েছে সকলের জন্য আদর্শ। এ পর্যায়ে সাধারণত কেউ উপনীত হতে পারে না। প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ যতটুকু সম্ভব তার আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। এর মধ্যে রয়েছে শিশুদের সাথে রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সোহাগ ও কৌতুক করা। সংক্ষিপ্ত আকারে এগুলোর কিছু দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরা হলো:

    শিশুদের সাথে তাঁর সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ

    জাবের ইবন সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الْأُولَى، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى أَهْلِهِ وَخَرَجْتُ مَعَهُ، فَاسْتَقْبَلَهُ وِلْدَانٌ، فَجَعَلَ يَمْسَحُ خَدَّيْ أَحَدِهِمْ وَاحِدًا وَاحِدًا، قَالَ: وَأَمَّا أَنَا فَمَسَحَ خَدِّي، قَالَ: فَوَجَدْتُ لِيَدِهِ بَرْدًا أَوْ رِيحًا كَأَنَّمَا أَخْرَجَهَا مِنْ جُؤْنَةِ عَطَّارٍ»

    “আমি রাসূলের সাথে ফজরের সালাত পড়লাম, অতঃপর তিনি বাড়ির দিকে বের হলেন, আমিও তার সাথে বের হলাম। পথিমধ্যে তার সাথে কিছু বাচ্চাদের সাক্ষাৎ হলো। তিনি তাদের এক এক করে প্রত্যেকের উভয় গালে হাত বুলাতে লাগলেন। মাহমুদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন, তিনি আমার উভয় গালে হাত বুলালেন আমি তার হাতের হিম শীতল সুগন্ধি উপলব্ধি করলাম। যেন তার হাতের সাথে সুগন্ধি ব্যবসায়ীর সামগ্রীর ছোঁয়া লেগেছে।"[1]

    উসামার প্রতি তাঁর ভালোবাসা:

    উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন,

    «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْخُذُنِي فَيُقْعِدُنِي عَلَى فَخِذِهِ، وَيُقْعِدُ الحَسَنَ عَلَى فَخِذِهِ الأُخْرَى، ثُمَّ يَضُمُّهُمَا، ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ ارْحَمْهُمَا فَإِنِّي أَرْحَمُهُمَا»

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ধরে তার এক রানে বসাতেন আর হাসানকে বসাতেন অন্য রানে। অতঃপর তাদের একত্র করতেন এবং বলতেন, 'হে আল্লাহ! তুমি তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করো, কেননা আমি তাদের প্রতি দয়া করি।"[2] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

    «اللَّهُمَّ أَحِبَّهُمَا، فَإِنِّي أُحِبُّهُمَا»

    “হে আল্লাহ! আমি তাদের ভালোবাসি, সুতরাং আপনিও তাদের ভালোবাসুন।"[3]

    মাহমুদ ইবন রবী-এর সাথে তাঁর কৌতুক:

    মাহমুদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন,

    «عَقَلْتُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَجَّةً مَجَّهَا فِي وَجْهِي وَأَنَا ابْنُ خَمْسِ سِنِينَ مِنْ دَلْوٍ»

    “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এক বারের পানি ছিটানোর কথা; 'তিনি আমার চেহারায় বালতি থেকে পানি ছিটিয়েছেন তখন আমার বয়স ছিল পাঁচ বছর যা আমার এখনো মনে আছে।"[4]

    তিনি এটা করেছেন কৌতুকরত বা বরকতস্বরূপ, যেমনটি তিনি সাহাবীদের সন্তানদের সাথে করতেন।

    শাইখ ইবন বায রহ. বলেন, 'এটা কৌতুক ও উত্তম চরিত্রের অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।'

    হাসান ও হুসাইন-এর সাথে তাঁর আদরপূর্ণ ব্যবহারের নমুনা

    ১। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «قَبَّلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ التَّمِيمِيُّ جَالِسًا، فَقَالَ الأَقْرَعُ: إِنَّ لِي عَشَرَةً مِنَ الوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدًا، فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «مَنْ لاَ يَرْحَمُ لاَ يُرْحَمُ»

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবন আলীকে চুম্বন করেন তখন তার নিকট আকরাহ ইবন হাবেস তামীমী বসা ছিলো। আকরাহ বলল, 'আমার দশটি সন্তান রয়েছে তাদের কাউকে আমি চুম্বন করি না।' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং বললেন, 'যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না।"[5]

    ২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «قَدِمَ نَاسٌ مِنَ الْأَعْرَابِ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: أَتُقَبِّلُونَ صِبْيَانَكُمْ؟ فَقَالُوا: نَعَمْ، فَقَالُوا: لَكِنَّا وَاللهِ مَا نُقَبِّلُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأَمْلِكُ إِنْ كَانَ اللهُ نَزَعَ مِنْ قَلْبِكَ الرَّحْمَةَ»

    “কিছু গ্রাম্য লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল এবং বলল, তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের চুমো খাও আমরা তাদের চুমো খাই না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তোমার অন্তরে দয়া উদ্রেক করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, যদি আল্লাহ তা ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন।"[6]

    ৩। হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা রাসূলের সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিলেন। এ ব্যাপারে ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের সম্পর্কে বলতে শুনেছি,

    «هُمَا رَيْحَانَتَايَ مِنَ الدُّنْيَا»

    “তারা আমার পৃথিবীর সুগন্ধিময় দুটি ফুল।"[7]

    অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা আমাকে তাদের দান করেছেন এবং তাদের দিয়ে সম্মানিত করেছেন। সন্তানদেরকে চুম্বন করা হয় এবং সুঘ্রাণ নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে সুগন্ধময় ফুলের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

    ৪। আবূ বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى المِنْبَرِ وَالحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ إِلَى جَنْبِهِ، وَهُوَ يُقْبِلُ عَلَى النَّاسِ مَرَّةً، وَعَلَيْهِ أُخْرَى وَيَقُولُ: «إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ»

    “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বারে আরোহণ অবস্থায় তার খুতবা শুনেছি, আর হাসান তার পাশে ছিল। তিনি একবার মানুষের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার তার দিকে তাকাচ্ছেন এবং বলেছেন, 'নিশ্চয় আমার এ সন্তান হলো নেতা। সম্ভবত আল্লাহ তা'আলা তাকে দিয়ে মুসলিমদের বিশাল দু'দলের মাঝে মীমাংসা করে দিবেন।"[8]

    পরবর্তীতে আল্লাহ তা'আলা তাকে দিয়ে মু'আবিয়া রাদিয়াল্লাহু 'আনহু ও তার সাথীদের এবং আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর অনুসারীদের ও তার সাথীদের মাঝে মীমাংসা করেন। অতএব, তিনি খেলাফত মু'আবিয়া রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর জন্য ছেড়ে দেন। ফলে আল্লাহ তা'আলা তার দ্বারা মুসলিমদের রক্ত হিফাযত করেন।

    ৫। বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ عَلَى عَاتِقِهِ، يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ»

    “আমি হাসান ইবন আলীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাঁধে দেখেছি এবং বলতে দেখেছি, 'হে আল্লাহ আমি তাকে ভালোবাসি। অতএব, আপনিও তাকে ভালোবাসবেন।"[9]

    সাজদাহ অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিঠে বাচ্চার আরোহণ:

    শাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي إِحْدَى صَلَاتَيِ الْعِشَاءِ وَهُوَ حَامِلٌ حَسَنًا أَوْ حُسَيْنًا، فَتَقَدَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعَهُ، ثُمَّ كَبَّرَ لِلصَّلَاةِ فَصَلَّى فَسَجَدَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ صَلَاتِهِ سَجْدَةً أَطَالَهَا، قَالَ أَبِي: فَرَفَعْتُ رَأْسِي وَإِذَا الصَّبِيُّ عَلَى ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ سَاجِدٌ فَرَجَعْتُ إِلَى سُجُودِي، فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ قَالَ النَّاسُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّكَ سَجَدْتَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ صَلَاتِكَ سَجْدَةً أَطَلْتَهَا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ قَدْ حَدَثَ أَمْرٌ أَوْ أَنَّهُ يُوحَى إِلَيْكَ، قَالَ: «كُلُّ ذَلِكَ لَمْ يَكُنْ وَلَكِنَّ ابْنِي ارْتَحَلَنِي فَكَرِهْتُ أَنْ أُعَجِّلَهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ»

    “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হলেন মাগরিব বা এশার সালাত পড়ানোর জন্য। হাসান বা হুসাইনকে তিনি বহন করছিলেন। অতঃপর তিনি সামনে গেলেন এবং তাকে রাখলেন। এরপর তিনি সালাতের মধ্যে একটি দীর্ঘ সাজদাহ করলেন। আমার পিতা বলেন যে, 'আমি আমার মাথা উত্তোলন করলাম আর দেখতে পেলাম সাজদারত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাঁধে একটি শিশু। আমি আমার সাজদায় ফিরে আসলাম। যখন রাসূলুলাহ সলালাহু আলাইহি ওয়াসালাম সালাত সম্পন্ন করলেন, তখন লোকেরা বলল, 'হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আপনি সালাতের মধ্যে একটা দীর্ঘ সাজদাহ করেছেন, যে কারণে আমরা মনে করলাম হয়তো কোনো কিছু হয়েছে অথবা আপনার কাছে ওহী আসছে।' তিনি বললেন, 'এগুলোর কোনোটাই হয় নি। তবে আমার একটি সন্তান আমার পিঠে আরোহণ করেছিলো, তাই আমি তার প্রয়োজন পূরণ না করে তাড়াহুড়ো করতে অপছন্দ করলাম।"[10]

    সালাতরত অবস্থায় যয়নব রাদিয়াল্লাহু 'আনহার মেয়েকে কোলে তুলে নেওয়া:

    আবু কাতাদাহ থেকে বর্ণিত যে,

    «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي وَهُوَ حَامِلٌ أُمَامَةَ بِنْتَ زَيْنَبَ بِنْتِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلِأَبِي العَاصِ بْنِ رَبِيعَةَ بْنِ عَبْدِ شَمْسٍ فَإِذَا سَجَدَ وَضَعَهَا، وَإِذَا قَامَ حَمَلَهَا»

    “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়া অবস্থায় উমামা বিনতে যয়নবকে বহন করছিলেন, যখন তিনি সাজদাহ করতেন তখন তাকে রেখে দিতেন। আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে কোলে তুলে নিতেন।"[11]

    শিশু বাচ্চারা কাঁদার সময় তাঁর সালাত পড়া সংক্ষিপ্ত করা:

    তিনি কোনো শিশু বাচ্চার কাঁদার আওয়াজ শুনলে সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন। এ ব্যাপারে আবূ কাতাদাহ তার পিতা থেকে ও তার পিতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

    «إِنِّي لَأَقُومُ فِي الصَّلاَةِ أُرِيدُ أَنْ أُطَوِّلَ فِيهَا، فَأَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ، فَأَتَجَوَّزُ فِي صَلاَتِي كَرَاهِيَةَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمِّهِ»

    “যখন আমি সালাতে দাঁড়াই তখন ইচ্ছা থাকে সালাত দীর্ঘ করব। কিন্তু যখন কোনো শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি, তখন তার মায়ের কষ্ট হবে ভেবে আমি নামায সংক্ষেপ করি।"[12]

    উম্মে খালেদের সাথে হাবশী ভাষায় কৌতক:

    এ ব্যাপারে উম্মে খালেদ বিনতে খালেদ ইবন সাঈদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ أَبِي وَعَلَيَّ قَمِيصٌ أَصْفَرُ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَنَهْ سَنَهْ» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: وَهِيَ بِالحَبَشِيَّةِ حَسَنَةٌ، قَالَتْ: فَذَهَبْتُ أَلْعَبُ بِخَاتَمِ النُّبُوَّةِ، فَزَبَرَنِي أَبِي، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهَا»، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبْلِي وَأَخْلِفِي ثُمَّ، أَبْلِي وَأَخْلِفِي، ثُمَّ أَبْلِي وَأَخْلِفِي» قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَبَقِيَتْ حَتَّى ذَكَرَ»

    “আমি আমার বাবার সাথে রাসূলের নিকট আসলাম, তখন আমার গায়ে হলুদ বর্ণের জামা ছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ''ছানাহ! ছানাহ!'' এটি হাবশী ভাষার শব্দ যার অর্থ, চমৎকার! চমৎকার! তিনি বলেন, 'অতঃপর আমি নবুওয়াতের মোহর নিয়ে খেলা করতে গেলাম। আমাকে আমার পিতা ধমক দিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'তাকে ধমক দিও না।' অতঃপর বলেন, ক্ষয় কর এবং জীর্ণ কর, অতঃপর ক্ষয় কর এবং জীর্ণ কর, অতঃপর আবার ক্ষয় কর এবং জীর্ণ কর।' আব্দুল্লাহ বলেন, অতঃপর সে মহিলা অনেকদিন জীবিত ছিল এমনকি তার কথা বর্ণনা করা হতো (যে অমুক দীর্ঘজীবি হয়েছে)[13] অর্থাৎ বর্ণনাকারী তার দীর্ঘ জীবনের কথা বুঝিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, উম্মে খালেদের মত আর কেহ এত দীর্ঘ জীবন লাভ করে নি।

    আবূ উমায়ের সাথে তার কৌতুক:

    আনাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ خُلُقًا، وَكَانَ لِي أَخٌ يُقَالُ لَهُ أَبُو عُمَيْرٍ - قَالَ: أَحْسِبُهُ - فَطِيمًا، وَكَانَ إِذَا جَاءَ قَالَ: «يَا أَبَا عُمَيْرٍ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ» نُغَرٌ كَانَ يَلْعَبُ بِهِ فمات».

    “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রিয় ছিল আমার এক ভাই, তার নাম আবূ উমায়ের। আমার মনে আছে, সে যখন এমন শিশু যে মায়ের বুকের দুধ ছেড়েছে মাত্র। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসতেন এবং বলতেন, 'হে আবূ উমায়ের! কী করেছে তোমার নুগায়ের?' নুগায়ের হলো এমন একটি ছোট পাখি যার সাথে আবু উমায়ের খেলা করত। নুগায়ের মারা গিয়েছিল।"[14]

    শিশু বাচ্চাদের সালাম দেওয়া

    আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি শিশু বাচ্চাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদের সালাম দিতেন এবং বলতেন, 'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন।"[15]

    রাসূলের কোলে শিশুদের প্রস্রাব:

    উম্মে কায়স বিনতে মিহসান থেকে বর্ণিত, তিনি তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে রাসূলের দরবারে আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার কোলে রাখলেন, সে তার কোলে প্রস্রাব করে দিল। তারপর তিনি পানি নিয়ে আসতে বললেন এবং পানি ছিঁটিয়ে দিলেন এবং তা ধৌত করেন নি।[16]

    এ ছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যা দ্বারা শিশুদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম আচরণ, সুন্দর ব্যবহারের বিষয়গুলোর বর্ণনা রয়েছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও শিশুদের ওপর শারীরিক যে নির্যাতন করা হয় তা থেকে সরে এসে রাসূলের শেখান পদ্ধতিই অনুসরণ করা উচিৎ।

    বড়দের ওপর শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া:

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান পাশের শিশু ছেলেকে বড়দের আগে শরবত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সাহল ইবন সায়াদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ، فَشَرِبَ مِنْهُ، وَعَنْ يَمِينِهِ غُلاَمٌ أَصْغَرُ القَوْمِ، وَالأَشْيَاخُ عَنْ يَسَارِهِ، فَقَالَ: «يَا غُلاَمُ أَتَأْذَنُ لِي أَنْ أُعْطِيَهُ الأَشْيَاخَ»، قَالَ: مَا كُنْتُ لِأُوثِرَ بِفَضْلِي مِنْكَ أَحَدًا يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ»

    “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এক পেয়ালা শরবত আনা হলো। তার থেকে তিনি শরবত পান করলেন এবং তার ডান পাশে ছিল দলের সবচেয়ে ছোট একটি ছেলে, আর বড়রা ছিল তার বাম পার্শ্বে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'হে ছেলে তুমি কি আমাকে অনুমতি দিবে যে, আমি তা বড়দের আগে দিব?' ছেলেটি বলল, 'হে আল্লাহর রাসূল! আপনার অনুগ্রহ লাভের ব্যাপারে আমি অন্য কাউকে আমার ওপর প্রাধান্য দিব না।' অতএব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দিলেন।"[17] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

    فَقَالَ لِلْغُلَامِ: «أَتَأْذَنُ لِي أَنْ أُعْطِيَ هَؤُلَاءِ؟» فَقَالَ الْغُلَامُ: لَا وَاللهِ، لَا أُوثِرُ بِنَصِيبِي مِنْكَ أَحَدًا، قَالَ: فَتَلَّهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَدِهِ

    তিনি ছেলেটিকে বললেন, “তুমি কি আমাকে অনুমতি দিবে এদের দেওয়ার। ছেলেটি বলল, না। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছ থেকে কিছু লাভ করার ব্যাপারে অন্য কাউকে প্রাধান্য দিব না। বর্ণনাকারী বলেন অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাতে রাখলেন।"[18]

    [1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩২৯।

    [2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০০৩।

    [3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৩৫।

    [4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭।

    [5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯৭।

    [6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩১৭।

    [7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯৪।

    [8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৪৬।

    [9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৭৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪২২।

    [10] নাসাঈ, হাদীস নং ১১৪১।

    [11] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১৬।

    [12] সহীহ বুখারী, হাদীস ৭০৭।

    [13] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৭১।

    [14] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২০৩।

    [15] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৪৭।

    [16] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৩।

    [17] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৫১।

    [18] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৩০।