ঈমান ও আক্বীদার মানদণ্ডে থার্টি ফাস্ট নাইট
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
ঈমান ও আক্বীদার মানদণ্ডে থার্টি ফাস্ট নাইট
[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]
শাইখ আবদুল্লাহিল-হাদী মু. ইউসুফ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
2014 - 1436
﴿حكم الاحتفال في ليلة الواحد والثلاثين من ديسيمبر﴾
« باللغة البنغالية »
عبد الله الهادي محمد يوسف
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
2014 - 1436
ভূমিকা
প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বারের রাতটিকে বিশ্বের অনেক দেশে থার্টি ফাস্ট রাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে, ইদানিং আমাদের দেশেও এই রাতটি উক্ত নামে আখ্যায়িত হচ্ছে। যদিও ইংরেজী নববর্ষ উদযাপন রেওয়াজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও আগে থেকে চলে আসছে। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে বর্ষবরণের সাথে সাথে যোগ হয়েছে এই নুতন কথাটি “থার্টি ফাস্ট নাইট" যা হয়তো আরো ১০-১৫ বছর আগে মানুষ শুনে নি।
প্রিয় পাঠক আজ আপনাদের সামনে আলোচনা করতে চাই এ থার্টি ফাস্ট নাইট নিয়ে।
নিঃসন্দেহে 'থার্টি ফাস্ট নাইট' এটি মুসলিমদের আবিষ্কার করা কোনো কথা নয় বরং এটি সর্বপ্রথম অমুসলিমরাই আবিষ্কার করেছে, তাই আসুন দেখি তারা কিভাবে এই রাতটি উপভোগ করে।
একেক দেশে একেক সংস্কৃতির মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়। একজন অন্য জনের গায়ে পানি ছিটিয়ে থাইল্যান্ডের উৎসব, আঙুর খেয়ে স্পেনের উৎসব, নববর্ষের শুরুতে ঘুমালে চোখের ভ্রু সাদা হয়ে যায় সে কারণে শুরুর সময়টাতে না ঘুমিয়ে কোরিয়ানদের উৎসব, রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে বারোটি ঘণ্টা বাজানোর মাধ্যমে মেক্সিকোর উৎসব, ভোর হওয়ার সাথে শিক্ষকদের নিকট র্দীঘায়ু কামনা করে ভিয়েতনামের উৎসব, পরিবারের সব সদস্যদের একত্রে রাত্রে আহার করার মাধ্যমে আর্জেন্টিনা উৎসব, সাদা পোষাক পরিধান করে ব্রাজিলবাসীর উৎসব পালিত হয়।
এই আবিষ্কারকদের উৎসব পালনের পদ্ধতি যেখানে কিছু কুসংস্কার এবং কিছু শালীন-অশালীন কর্মকাণ্ড রয়েছে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নবাবিষ্কৃত এরাতের ভয়াবহতাঃ
আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র, আমাদের দেশে এই রাত পালন হচ্ছে, নাচ,গান, বেহায়াপনা এবং চরম অশ্লীলতার লেটেষ্ট রূপ ডিজে পার্টির মাধ্যমে।
প্রিয় পাঠক, দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য হল এই যে, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মর্ডান হওয়ার নামে তরুণ-তরুনীরা এরাতে 'মার্ডার' হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
«صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا»
দুই শ্রেণীর জাহান্নামী রয়েছে, যাদের আমি এখনও দেখিনি। এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরু পরিচালনা করার লাঠি থাকবে। তা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। আর নগ্ন পোষাক পরিধানকারী নারী, যারা পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ এর সুগন্ধি এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়'। - মুসলিম, ২১২৮।
কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি:
প্রথমতঃ আমরা মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনের সবকিছুই হতে হবে ইসলামের আলোকে, অথচ এই ইসলাম তার নিজস্ব বর্ষবরণ অর্থাৎ আরবী বর্ষবরণের কথাও তার কোনো অনুসারীকে বলে নি।
দ্বিতীয়তঃ রাত এবং দিন, আল্লাহর সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত, তাই তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর বিধান মোতাবেক ব্যবহার এবং ভোগ ও উপভোগ করাই সমীচিন। তাই আসুন আমার দেখি রাত সম্পর্কে আল্লাহ্ কি বলেছেন?
সূরা আন-নাবার ১০-১১ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
﴿ وَجَعَلۡنَا ٱلَّيۡلَ لِبَاسٗا ١٠ وَجَعَلۡنَا ٱلنَّهَارَ مَعَاشٗا ١١ ﴾ [النبا: ١٠، ١١]
অর্থ, “রাতকে করেছি আবরণ আর দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়।
আল্লাহ তা'আলা সূরা ইউনুসের -৬৭ নং আয়াতে আরও বলেন,
﴿ هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ لِتَسۡكُنُواْ فِيهِ وَٱلنَّهَارَ مُبۡصِرًاۚ﴾ [يونس: ٦٧]
অর্থঃ “তিনি তোমাদের জন্য তৈরী করেছেন রাত; যাতে করে তোমরা তাতে প্রশান্তি লাভ করতে পার, আর দিন দিয়েছেন দর্শন করার জন্য।
অনুরূপভাবে সূরা আল-কাসাসের ৭৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা'লা বলেছেন,
﴿ وَمِن رَّحۡمَتِهِۦ جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ لِتَسۡكُنُواْ فِيهِ وَلِتَبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِهِۦ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٧٣ ﴾ [القصص: ٧٣]
অর্থঃ “তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদো জন্য রাতও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
সূরা আল-মুযযাম্মিলের ১-৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ তা'লা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُزَّمِّلُ ١ قُمِ ٱلَّيۡلَ إِلَّا قَلِيلٗا ٢ نِّصۡفَهُۥٓ أَوِ ٱنقُصۡ مِنۡهُ قَلِيلًا ٣ أَوۡ زِدۡ عَلَيۡهِ﴾ [المزمل: ١، ٤]
অর্থঃ “হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে, অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশী।
তাহলে এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে রাতের মূল কাজ হল মানুষ আরাম করবে এবং রাতের কিছু অংশ আল্লাহর ইবাদাতে অতিবাহিত করবে।
হাদীসে রাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ينزل ربنا تبارك وتعالى إلى السماء الدنيا كل ليلة حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول: من يدعوني فأستجيب له، من يسألني فأعطيه، من يستغفرني فأغفر له، حتى ينفجر الفجر»
অর্থঃ“ রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে আমাদের রব পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট কিছু চাইবে আমি তাকে তা দিব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব, এভাবে ফযর হওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকে। (বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫; মুসলিম, হাদীস নং-৭৫৮)।
প্রিয় পাঠক, মহান আল্লাহ্ যখন মানবমণ্ডলীকে এভাবে আহ্বান করতে থাকে তখন কেউ কি করে অশ্লীলতা এবং বেহায়াপনায় মগ্ন থাকতে পারে ? !
তাই আমাদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং অন্যায় অশ্লীলতা থেকে বিরত থেকে জীবনকে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় অতিবাহিত করা। এ রাত্রি উদযাপন করা থেকে নিজেকে ও পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্তুতিকে বাঁচিয়ে রাখা। কারণ এ জাতীয় উৎসব পালন অবৈধ, হারাম ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ-অনুকরণ। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»
“যে কেউ অন্য কোনো জাতীর সামঞ্জস্যতা বিধান করবে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে"। [আবু দাউদ: ৪০৩১]